ত্রিতল ভবনের বিদ্যালয়টির প্রথম ছাদ ঢালাইয়ের জন্য রডের যে কাঠামো তৈরি করা হয়েছে তা গত প্রায় চার মাস যাবত বৃষ্টিতে ভিজে রোদে শুকাচ্ছে। ছাদের জন্য গাথাঁ সবগুলো রডই মরিচা ধরে পুরো লাল হয়ে গেছে। আবার প্রথম ছাদ থেকে উপরের দিকে যাওয়া রডগুলো শক্ত মরিচায় আবৃত। হাত লাগলেই মরিচা ভেঙ্গে হাতে চলে আসে। মাঠেও মরিচায় লাল হওয়া কিছু রড এবং সামান্য কিছু পাথর পড়ে আছে।
স্থানীয়রা জানায়, গত আড়াই বছর আগে পিলারের এ রডগুলো গাথাঁ হয়। সোয়া চার কোটি টাকা ব্যয়ে স্কুল ভবন কাম ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ কাজে স্থানীয়রা এমন সব গাফিলতির অভিযোগ করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
বুধবার ( ৯ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের চর পাগলা পাটওয়ারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে এমন হ-য-ব-র-ল দৃশ্য দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানায়, বিদ্যালয়ের ত্রিতল ভবন নিমার্ণ প্রকল্পটির মেয়াদ ২৪ মাস। কিন্ত কাজ শুরু করার আড়াই বছর পার করে একটি ছাদও নির্মাণ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশন। এ প্রতিষ্ঠানটির ধীরগতির কাজ দেখে স্থানীয়রা চরম ক্ষুব্ধ।
এলাকার স্থানীয় যুবক হাসান মাহমুদ মিশু অভিযোগ করে জানান, ঠিকাদার নিজেদের ইচ্ছে মতো যা খুশি তাই করছে। তাদের কে কেউ তদারকিও করছে না।
বিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো: ইউছুফ জানান, ঠিকাদার তার ইচ্ছে মতো ফাইলিংসহ নিচের কাজ করছিল। কিন্ত পরে আমরা স্থানীয়রা নিয়ম অনুযায়ী কাজ করার তাগিদ দেয়া মাত্রই নানা অজুহাত তৈরি করে নিমার্ণ কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ রেখেছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) লক্ষ্মীপুর সূত্রে জানা যায়, মাল্টিপারপাস ডিজেস্টার শেল্টার প্রজেক্ট (এমডিএসপি) এর আওতায় ও বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তা ৪ কোটি ২৩ লাখ টাকায় ব্যয়ে ত্রিতল এ বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। কাজটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) লক্ষ্মীপুর। উক্ত প্রকল্পের অধীন ৩৪টি বিদ্যালয় ভবন কাম ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের ১৬টি নির্মিত হচ্ছে লক্ষ্মীপুরে। যার মধ্যে রামগতি উপজেলায় ১০টি এবং কমলনগর উপজেলায় ৬টি।
২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল তারিখে কমলনগর উপজেলার এ কাজটির উদ্বোধন করেন, লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি -কমলনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো: আবদুল্লাহ। প্রকল্পের তথ্য বোর্ডে কাজটি ২৪ মাসে শেষ হবে বলে সময়ক্ষণ উল্লেখ আছে। উদ্বোধনের পর থেকে আড়াই বছর পার হলেও একটি ছাদও নির্মাণ হতেও দেখা যায়নি।
নির্মাণাধীন বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার মফিজুল উল্লাহ অভিযোগ করে জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশন ভবনটি নির্মাণ না করেই বিল উত্তোলনের নানা পায়তারা করছে। আবার কাজটি যদিও শেষ করে তবে তা হবে কোন রকম দায়সারা। তিনি আরো জানান, ভবনটি নির্মাণকালীন সময়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখার জন্য যে অস্থায়ী টিনশেড ঘর তৈরি করা হয়েছে তাও ভেঙ্গে গেছে। ভবিষ্যতে ছাত্রছাত্রীরা কোথায় লেখাপড়া করবে তা নিয়ে দু:চিন্তায় তিনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ ও দীর্ঘদিন কাজ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে নাভানা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (জিএম) মো: জাহিদ বলেন, পাথর আসতে দেরি হওয়ায় কাজে বিলম্ব হচ্ছে। কিন্ত রড এতদিন খোলা বাতাসে রাখা যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর দেননি। তিনি আরো জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই কাজটি শুরু করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমলনগর উপজেলা প্রকৌশলী সহেল আনোয়ার জানান, এ প্রকল্পের অধীন চলামান সবগুলো কাজের দ্রুত অগ্রগতির জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বার বার তাগিদ দেয়া হয়েছে। তাদের কাজে চরম ধীরগতি রয়েছে।
0Share