কাজল কায়েস, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: লক্ষ্মীপুরে পান চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন চাষিরা। অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় পান চাষে আগ্রহ বাড়ছে উপকূলীয় এ জেলার চাষিদের। এখানকার উৎপাদিত পান জেলাবাসীর চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এবার উৎপাদিত পানকে ঘিরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার লেনদেন হবে বলে আশা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজনীয় ঋণ সুবিধা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লক্ষ্মীপুরে উৎপাদিত পান বিদেশে রফতানি করে জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখা সম্ভব।
কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি বছর লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, কমলনগর ও রামগতি উপজেলায় ৫শ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে শুধু রায়পুর উপজেলায় আবাদ হয়েছে প্রায় ৪শ হেক্টর জমিতে। প্রতি একর জমিতে পানের উৎপাদন ব্যয় হয় ৫-৬ লাখ টাকা, আর তা বিক্রি হয় ১০-১২ লাখ টাকায়।
সপ্তাহে দুইদিন পানের সবচেয়ে বড় হাট বসে রায়পুরের হায়দরগঞ্জ ও নতুন বাজারে। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে পান সংগ্রহ করে সড়ক পথে নিয়ে যায়। জেলার পানপল্লী খ্যাত রায়পুরের ক্যাম্পেরহাট ও চরআবাবিল এলাকা। এসব এলাকার ৬০ শতাংশ মানুষ পান চাষ এবং ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল।
কৃষকদের ভাষ্যমতে, পুঁজির অভাবে তারা পানের চাষাবাদ সম্প্রসারণ করতে পারছেন না। কাণ্ড পচা, পাতা ঝরাসহ বিভিন্ন রোগ ছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রয়োজনীয় ঋণ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে গ্রামীণ অর্থনীতি আরো চাঙ্গা হবে। বদলে যাবে মানুষের জীবনযাত্রার মান।
রায়পুরের ক্যাম্পের হাটের কৃষক উত্তম কুমার ও ঝাউডগী গ্রামের মো. ফরহাদ হোসেন জানান, পান লাভজনক ফসল। উৎপাদন খরচের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন লাভ হওয়ায় ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করানোর পাশাপাশি স্বাবলম্বী হচ্ছেন তারা। তবে প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাবে পানের বরজের প্রসার ঘটনো যাচ্ছে না।
মিতালী বাজার মডেল একাডেমরি প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম জানান, পান চাষের কারণে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা রয়েছে। প্রয়োজনীয় ঋণ সুবিধা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লক্ষ্মীপুরে উৎপাদিত পান বিদেশে রফতানি করে জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখা সম্ভব।
দক্ষিণ চর আবাবিল গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন বেপারী বলেন, এখানকার উৎপাদিত পান সুস্বাদু হওয়ায় তা জেলাবাসীর চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এ মাঠ ফসলকে ঘিরে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা বদলে যাচ্ছে।
রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল মমিন বলেন, বর্ষা মৌসুমে পানের উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে দাম কম থাকে। আর শীতে ফলন কম হওয়ায় দাম চড়া থাকে। মাঠে পানের উৎপাদন বাড়ানো, রোগ-ব্যাধি নির্মূল, সার ও কীটনাশকের সঠিক ব্যবহারে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ গোলাম মোস্তফা বলেন, লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলে পান চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এবার উৎপাদিত পান থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
0Share