আতোয়ার রহমান মনির:: অপ্রশস্ত সড়ক, একই সড়কে বেশি গাড়ি ও অদক্ষ চালক এবং আইন না মেনে বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চলাচলে লক্ষ্মীপুরে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে অর্ধশত লোকের। এ ছাড়া পঙ্গুত্ব বরণসহ আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন শতেরও বেশি।
‘রায়পুর-চৌমুহনী সড়কে বেশি দুর্ঘটনা হওয়ায় অনেকেই একে বলেছেন ৪৮ কিলোমিটার ভয়ঙ্কর সড়ক।’
নিহতদের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আমির হোসেন বকুলসহ তিনজন। ফেব্রুয়ারিতে কমলনগরে যাত্রীবাহী বাসের চাপায় নিহত হন মান্নান নামে একজন। রায়পুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন সদর হাসপাতালের স্টোরকিপার মহিউদ্দিনসহ দু’জন। মার্চে ভবানীগঞ্জের স্কুলছাত্র শাহরিয়ার হোসেন ও রামগঞ্জে রাকিবুল হাসান নিহত হন। এপ্রিল মাসে ট্রাকের ধাক্কায় সালাউদ্দিন নামের এক পথচারী নিহত হন। মে মাসে অটোরিকশাচালক সুমনসহ আরও দু’জন নিহত হন। জুনে যুবদল নেতা ইউছুফ, পুলিশ কর্মকর্তা কামাল হোসেন ও জহিরুল ইসলামসহ আরও দু’জন নিহত হন। জুলাইয়ে ট্রাকচালক রবিউল, রায়পুর সড়কে নিয়ন ও অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি নিহত হন। আগস্টে লক্ষ্মীপুরের রামগতি সড়কে স্কুলছাত্র ইকবাল হোসেন ও রায়পুর-লক্ষ্মীপুর সড়কে নাজমা বেগম ও রুস্তম আলী নিহত হন।
এভাবেই সড়কে ৬ মাসে অর্ধশত লোকের প্রাণহানি ঘটে। এ ছাড়া রায়পুর-চৌমুহনী, লক্ষ্মীপুর-মজু চৌধুরীর হাট, লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ, হায়দরগঞ্জ-রায়পুর, রামগতি-লক্ষ্মীপুরের সড়কগুলো আঁকাবাঁকা হওয়ায় একই সড়কে চলতে গিয়ে গাড়ি না দেখায় সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাসহ প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
জেলা তথ্য অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, রায়পুর থেকে চৌমুহনী সড়কের দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটার। সড়ক প্রশস্ত কম হওয়ায় ও বেশি গাড়ি চলাচল করায় বেড়ে গেছে দুর্ঘটনা। দ্রুত আঞ্চলিক মহাসড়ককে ৪ লাইনে প্রশস্ত হলে এ রুটের দুর্ঘটনা কমবে। লক্ষ্মীপুর ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট জুলহাস জানান, লক্ষ্মীপুরের রাস্তা সরু হওয়া, পাশাপাশি দুটি গাড়ি চলাচলের সময় আগে যাওয়ার প্রবণতা ও চালকের সহযোগী দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণেই দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ।
চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চালকের অসাবধানতার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা হয়। গাড়ির তুলনায় সড়ক অপ্রসস্ত। তাছাড়া চালকদের রয়েছে আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। এ কারণে একের পর এক দুর্ঘটনা বেড়ে চলছে লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক সড়কে।
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন জানান, যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবাদুল কাদেরের কাছে রায়পুর থেকে চৌমুহনী সড়কে ফোর লাইন করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তিনি চলতি অর্থবছরে সড়কের দু’পাশ বৃদ্ধি ও পরে ফোর লাইনে রূপান্তর করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার আ স ম মাহতাব উদ্দিন জানান, রায়পুর থেকে চৌমুহনী সড়কের প্রশস্ততা বৃদ্ধি করলে দুর্ঘটনা কমে যাবে । এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
0Share