আলী হোসেন: ২০১৪-১৫ সালে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক একেএম টিপু সুুলতানের একটি মৌখিক আদেশের প্রেক্ষিতে জেলার বাজার ফেরী ফেরী ভূক্ত ব্যক্তি মালিকানাধিন দোকান ভিটির খাজনা আদায় বন্ধ রেখেছে ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তারা (তহশীলদার)। এতে ভূমি উন্নয়ন কর, জমা খারিজ খতিয়ান ‘ফি’ ও দলিল রেজিষ্ট্রেশন ‘ফি’ বাবত প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অন্যদিকে দোকান ভিটির মালিক ও ব্যবসায়ীরা ব্যাংক মডগেজসহ প্রয়োজনের তাগিদে ভূমি বেচাকেনা করতে না পারায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা।
ভুক্তভোগিরা জানায়, সারাদেশে একই নিয়মে গড়ে ওঠা বাজার ফেরী ফেরী ভূক্ত দোকান ভিটি ও জমির খাজনা আদায় অব্যাহত থাকলেও ১৯৫৯ সনের ভূমি অধ্যাদেশের অজুহাতে শুধুমাত্র লক্ষ্মীপুরে খাজনা আদায় বন্ধ রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন যাবত। ভুক্তভোগি নুরুল আমিন, সামছুল করিম হক সাহেব, হাবিবুর রহমানসহ অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, সারাদেশে এক ধরণের নিয়ম অথচ লক্ষ্মীপুরে অন্য নিয়ম কেন? তারা বলেন, মৌখিক আদেশে খাজনা আদায় বন্ধ রাখা কতটুকু যুক্তিযুক্ত এবং আইনসিদ্ধ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দোকান ভিটির খাজনা আদায় বন্ধ এবং জমা খারিজ খতিয়ান করতে না পারায় হাট-বাজারের সম্পত্তি বেচাকেনা করা সম্ভব হচ্ছেনা। যে কারণে গত পাঁচ বছর ধরে লক্ষ্মীপুর জেলার কয়েক লক্ষ দোকান মালিক ও জমি ক্রেতা-বিক্রেতারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
ভুক্তভোগি দোকান মালিকরা জানান, অর্ধশত বছর আগের অকার্যকর একটি অধ্যাদেশের অজুহাত তুলে লক্ষ্মীপুরে আমাদের মালিকানা জমির খাজনা গ্রহণ করা হচ্ছেনা এবং জমা খারিজ খতিয়ান খোলা বন্ধ রেখেছেন ভূমি সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভূমি সহকারি কর্মকর্তা জানান, ২০১৪ সালে জেলা প্রশাসকের মৌখিক নির্দেশে আমরা জমা খারিজ খতিয়ান ও খাজনা গ্রহণ বন্ধ রেখেছি। ১৯৫৯ সনের ভূমি অধ্যাদেশের আলোকে ডিসি সাহেব এই নির্দেশনা দিয়েছেন বলে ওই ভূমি সহকারি কর্মকর্তা জানান।
এদিকে দোকান ভিটির খাজনা আদায় ও জমা খারিজ খতিয়ান খোলা বন্ধ থাকায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে একটি জালিয়াত চক্র। দোকান-ভিটির খাজনা পরিশোধ ও জমা খারিজ খতিয়ান খুলতে ব্যর্থ হয়ে অনেক জমি ক্রেতা-বিক্রেতা দালালদের মাধ্যমে জালিয়াতির আশ্রয় নিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে ভূমি কর্মকর্তার সীল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে ভুয়া দাখিলা, মাঠ খতিয়ান, ছাপা খতিয়ান ও জমা খারিজ খতিয়ান পর্যন্ত সৃজন করা হচ্ছে। এসব সৃজন করা কাগজপত্র দিয়ে গোপন গোপনে জমি রেজিষ্ট্রেশন করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। অপরদিকে সৃজন করা ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে জমি রেজিষ্ট্রেশনের সময় লেনদেন হচ্ছে মোটা অংকের ঘুষ।
এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লক্ষ্মীপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগি জনসাধারণ।
0Share