সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর শুক্রবার , ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
লক্ষ্মীপুরের চর রমণীমোহন: যেখানে নাগরিক সুবিধা পুরোপুরি অনুপস্থিত 

লক্ষ্মীপুরের চর রমণীমোহন: যেখানে নাগরিক সুবিধা পুরোপুরি অনুপস্থিত 

0
Share

লক্ষ্মীপুরের চর রমণীমোহন: যেখানে নাগরিক সুবিধা পুরোপুরি অনুপস্থিত 

রফিকুল ইসলাম মন্টু : চর রমণীমোহনে কিছু মানুষের বসবাস থাকলেও এখানে নাগরিক সুবিধা পুরোপুরি অনুপস্থিত। লক্ষ্মীপুর ও ভোলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সব হারিয়ে এই দ্বীপে আসা নারী-পুরুষ ও শিশুরা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। খাবার পানি নেই, চলাচলের পথ। শিক্ষা-স্বাস্থ্য সবদিক থেকেই এরা ডুবে আছে অন্ধকারে। যেকোন কাজে নৌকা পার হয়ে এদেরকে মতিরহাটে যেতে হয়। দুর্যোগ কবলিত হয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা চরের অস্থায়ী বাসিন্দারা স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে।

আরো পড়ুন:  লক্ষ্মীপুরের চর রমনীমোহন: দুর্যোগ-তাড়িত মানুষের ঠাঁই

দ্বীপের অস্থায়ী বাসিন্দা আলী আহম্মদের স্ত্রী বিবি রহিমা বলছিলেন, এখানে ছিল একটি মুজিব কিল্লা। সেখানে ২৫-৩০টি পরিবার ছিল। কিল্লাটি নদী ভাঙণে হারিয়ে যাওয়ায় ওই পরিবারগুলোর অনেকেই অন্যত্র চলে গেছে। কিছু পরিবার এখনও রয়ে গেছে। কিন্তু দুর্যোগের সময় এদের এখানে বসবাসে খুবই অসুবিধা হয়। বর্ষায় ঘরের মাচার ওপরে মালামাল নিয়ে বসবাস করেন এরা। শুকনোয় যে পথে পায়ে হেঁটে চলাচল করা যায়, বর্ষায় সে পথ তলিয়ে থাকে ৭-৮ ফুট পানির নিচে। তখন সাপের উপদ্রবও বেড়ে যায়।

দ্বীপের বাসিন্দারা জানালেন, বর্ষার সময়ে এই দ্বীপে বসবাস কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। কেউ কেউ অতিকষ্টে মাচা পেতে থাকলেও অনেকে আবার তখন দ্বীপ ছেড়েই চলে যায়। শুকনোয় আবার ফিরে আসে। দ্বীপে বর্ষায় জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা পেতে অনেকে ঘরের ভিটে উঁচু করে নিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয় না। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় উঁচু ভিটেও। বর্ষাকালে মানুষগুলো চলাচল করে নৌকায়।

শিক্ষা-স্বাস্থ্য প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও চর রমনীমোহনে তা একেবারেই অনুপস্থিত। বর্ষা ও শীতে এখানে ঠান্ডাজনিত রোগবালাইয়ের প্রকোপ বেড়ে যায়। পাওয়া যায় না ওষুধপত্র। জরুরি সময়ে রোগীকে সময়মত চিকিৎসকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। হাটবাজার তো দূরের কথা, চরে একটি দোকানও নেই।

দ্বীপের শিশুদের কারও স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। অধিকাংশই শিশুকাল থেকেই রাখাল ও বাথানের কাজে নিয়োজিত হয়। গরু-মহিষ চড়ানো, খাবার সংগ্রহ এসব কাজে ব্যস্ত থাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি। রাতে আবার গরু-মহিষ পাহারা দিতে হয়। নাম দস্তখত, হিসাব-নিকাশ কিছুই জানে না ওরা।

একজন আবদুস সোবাহান, বয়স ১২ বছর। বাবার নাম আবুল কাশেম মাঝি। জীবনে কখনোই স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। চরে তার কাজ ৫টি গরুর লালন পালন। খাবার সংগ্রহ থেকে সব কাজই তাকে করতে হয়। মাসে বেতন ১২০০ টাকা। আরেকজন সোহাগ, বয়স ৯ বছর। বাবা হানিফ মাঝি মাছ ধরে। সোহাগেরও একই কাজ। বর্গা লালন পালন করছে ২টি গরু। রুবেল, সোনিয়া, মনির, নাজমুন নাহার, রাবিয়া, আমেনা, রেদোয়ান, হাবিবা, সুমাইয়াসহ আরো বেশ কয়েকজন শিশুর সঙ্গে আলাপ। এরা কেউ কখনো স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়নি।

এই শিশুদের অভিভাবকেরা বলেছেন, অনেক কষ্ট করে এখান মানুষেরা জীবনযাপন করছেন। পরিবারের সবাই মিলে তিনবেলা খাবার যোগাড় করাই যেখানে অধিক কষ্টের, সেখানে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর সুযোগ কোথায়। তবে চরে একটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলে শিশুরা অন্তত নাম-দস্তখত ও হিসাব নিকাশ শিখতে পারবে।

শিশুদের দিকে তাকিয়ে চোখে পড়ে কংকালসার শরীর। অপুষ্টির ছাপ স্পস্ট সারা শরীরে। তিনবেলা পেটভরে পুষ্টিকর খাবার খেতে না পারলেও কাজ থেকে এদের ছুটি মেলে না। তবে শিশু এবং অবিভাবক সকলেই জানালো, স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হলে দ্বীপের এই শিশুরা স্কুলে যাবে।

দ্বীপের ভেতর দিয়ে চলে গেছে আঁকাবাঁকা সরু খাল। বর্ষায় যেমন এই খালের দু’কূল উপচে পানিতে তলিয়ে যায় গোটা দ্বীপ, তেমনি বিপরীতে শুকনোয় এ খালগুলোও একেবারেই শুকিয়ে থাকে। ফলে এই মৌসুমে পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। হোসেন আলীর স্ত্রী নাসরিন বেগমকে ঘরের পাশের ডোবার নোংরা পানিতে রান্নার চাউল ধুইতে দেখা গেল। নাসরিন বলেন, এ ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নাই। এখানে কোন নলক‚প নাই। বর্ষায় পানিতে ভাসি, আবার শুকনোয় পানি পাওয়া যায় না। এই ডোবার পানিতেই তাদের রান্নাবান্না, থালাবাটি ধোয়া, গোসল সব কাজই সারতে হয়।

আবুল কাশেমের স্ত্রী বিবি জামেলা বলেন, এক সময় আমাদের জমি ছিল, ঘরবাড়ি ছিল। নদী ভাঙণে সব হারিয়ে যাওয়ায় এখানে এসে ঠাঁই নিয়েছি। আমরা তো এদেশেরই নাগরিক। আমাদের স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার ব্যবস্থাটা সরকার করে দিক। আমরা তো আর কিছু চাই না।

দ্বীপের জেলে ইউসুফ আলীর স্ত্রী বিবি রহিমা বলেন, এখানে আমরা ইচ্ছা করে আসিনি। সব হারানোর পর কোথাও থাকার জায়গা না পেয়ে নিরূপায় হয়ে এই চরে ঠাঁই নিয়েছি। ঝড়-জলোচ্ছ¡াসে ভাসি, আমাদের খোঁজ কেউ নেয় না। শুনি সরকার ভ‚মিহীন মানুষদের জন্য অনেককিছু দিচ্ছে। আমরা কিছুই পাই না। একই দাবি তোলেন দ্বীপের বাসিন্দা বেলাল মাঝি। তিনি বলেন, আমরা এদেশের নাগরিক কিনা, সেটাই বুঝতে পারছি না। আমাদের খোঁজ কেউ নেয় না।

চরের এক প্রান্তে দাঁড়ালে চোখে পড়ে ধূ ধূ মাঠ আর ছড়ানো ছিটানো ছোট ছোট ঘর। অত্যন্ত উর্বর ভ‚মি হওয়া সত্বেও বছরের অধিকাংশ সময় পতিত থাকছে বেশিরভাগ জমি। সুযোগ সুবিধা অনুযায়ী চরের জমিতে ধান, সয়াবিন, বিভিন্ন জাতের ডাল ইত্যাদি আবাদ হচ্ছে। অথচ পরিকল্পিতভাবে এই জমিতে আবাদ করলে যেকোন ফসলের বাম্পার ফলন হতে পারে। একইসঙ্গে দ্বীপকে ভাঙণের হাত থেকে রক্ষা করে এখানে গড়ে উঠতে পারে জেলেপল্লী।

আরো পড়ুন: লক্ষ্মীপুরের চর রমনীমোহন: দুর্যোগ-তাড়িত মানুষের ঠাঁই

রফিকুল ইসলাম মন্টু, বাংলাদেশে উপকূল সাংবাদিকতার পথিকৃত এবং দেশে উপকূল দিবসের প্রবর্তক। এ বিষয়ে আরো জানতে দেখুন:

লক্ষ্মীপুর নিউজ আরও সংবাদ

সাংবাদিক জিয়া চৌধুরীর বাবা মাহাবুবের রহমান আর বেঁচে নেই

রামগতিতে আদালতের স্থিতাবস্থা মানছেন না অবৈধ ইটভাটার মালিকপক্ষ

গরমের শুরুতে রামগতিতে ভয়াবহ লোডশেডিং, ভোগান্তিতে উপকূলের গ্রাহক

রামগতিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৮ পরিবারের বসতঘর পুড়ে ছাই

কমলনগরে চার্টার্ড লাইফের মৃত্যু বীমা দাবি চেক হস্তান্তর

কমলনগরে হিফজুল কুরআন ও ইসলামী সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Chief Mentor: Rafiqul Islam Montu, Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu.
Muktijudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794 822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com