সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর মঙ্গলবার , ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রায়পুর মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র: দুর্নীতিতে হাবুডুবু

রায়পুর মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র: দুর্নীতিতে হাবুডুবু

রায়পুর মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র: দুর্নীতিতে হাবুডুবু

কাজল কায়েস: কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতি আর জনবল সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ফলে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন কার্যক্রম। রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ভেস্তে যেতে বসেছে বিপুল সম্ভাবনাময় এ প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে সরকারের উদ্দেশ্য।জানা গেছে, চাঁদপুর সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ প্রকল্পের দুই হাজার ৪২৮ হেক্টর বদ্ধ জলাশয়, দুই হাজার হেক্টর জমির বোরোপিট ও প্রধান খালগুলোতে মাছ চাষের লক্ষ্যে মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র করার উদ্যোগ নেয় সরকার। রুই-জাতীয় মাছের রেণু ও পোনা সরবরাহ করে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ১৯৭৯ সালে এটি স্থাপন করা হয়। চার কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে করা রায়পুরের মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯২ সালে। ২১ দশমিক ৮৩ হেক্টর আয়তনের এ কেন্দ্রে মোট পুকুর আছে ৭৫টি।

মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র সূত্র জানায়, এখানে ৮১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনুমোদিত পদ রয়েছে। তবে কর্মরত আছেন ২৮ জন। বাকি ৫৩টি পদে দীর্ঘদিন ধরে লোকবল নেই। শূন্যপদগুলো হলো বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছয়টি, মৎস্য সম্প্রসারণ সুপারভাইজার চারটি, ক্ষেত্র যোগ গবেষণাগার সহকারী ছয়টি, দক্ষ ফিশারম্যান ছয়টি, অফিস সহায়ক, হ্যাচারি গার্ড, নৈশপ্রহরী চারটি করে, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) ও উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) একটি করে। এ ছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ১৫টি পদ শূন্য রয়েছে।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, সাম্প্রতিককালে রসিদ ছাড়া রেণু বিক্রি, দরপত্র (টেন্ডার) ছাড়াই মৎস্যজাত দ্রব্য (ওষুধ) কেনা ও উন্নয়নকাজ করা, পুকুরে পরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত চুন দিয়ে মা মাছ মেরে তা বাইরে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। প্রতিষ্ঠানটির সম্প্রসারণ সুপারভাইজার মো. কামাল উদ্দিন গত ১৪ মে নোয়াখালী সদর উপজেলার মৎস্য চাষি জালাল ও নাজমুলের কাছে রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালি বাউশের রেণু বিক্রি করেন ১৫ হাজার ৬৫০ টাকার। তাঁদের ০০১৫৯৮৯ নম্বর রসিদও দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারি হিসাবের মূল্য তালিকার একই নম্বর রসিদে উল্লেখ করা হয়েছে দুই হাজার ২০ টাকা। একই কর্মকর্তা ৮ মে লক্ষ্মীপুরের রামগতির ইউছুফের কাছে রুইসহ চার প্রজাতির রেণু বিক্রি করেন সাত হাজার ২৪০ টাকার। তাঁকে ০০১৫৯৩৫ নম্বর রসিদ দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারি হিসাবের মূল্য তালিকায় একই নম্বর রসিদে উল্লেখ রয়েছে ৬৫৫ টাকা। এ ছাড়া নোয়াখালীর জালাল উদ্দিন নামের এক মৎস্য খামারির কাছে চার কেজি রেণু ১৫ হাজার ৬৫০ টাকার রসিদের মাধ্যমে বিক্রি করা হলেও সরকারি হিসাবে ওঠানো হয়েছে মাত্র ৬২০ টাকা। আর সরকারি হিসাবের অংশে রেণুর পরিমাণ লেখা হয়েছে মাত্র ৫০০ গ্রাম। ১ অক্টোবর বিকেলে আলোনিয়া এলাকার এক মৎস্য চাষির কাছে প্রায় ১০ হাজার রুই ও কাতলের পোনা রসিদ ছাড়াই বিক্রি করা হয়। পরে স্থানীয় এক সংবাদকর্মী বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নজরে আনলে ব্যাপক হইচই পড়ে যায়। এভাবে অনেক খামারির ক্রয় রসিদে বেশি অঙ্কের টাকা আর সরকারি রসিদে টাকার পরিমাণ কম এবং রসিদ ছাড়া রেণু বিক্রির প্রমাণ মিলেছে। এতে সরকারি অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটছে।

টাকায় গরমিলের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির সম্প্রসারণ সুপারভাইজার মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘দু-একটি রসিদে ভুলে টাকার অঙ্ক গরমিল থাকতে পারে। এ ছাড়া আমার বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। ’

অভিযোগ রয়েছে, গত মার্চ মাসে অক্সিজেনের অভাবে কেন্দ্রের ৩ ও ৩৫ নম্বর পুকুরের অন্তত পাঁচ মণ রুই, কাতল, মৃগেল ও সিলভারের মা মাছ মারা গেছে। প্রতিটি মাছের ওজন পাঁচ থেকে আট কেজি। কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কর্মচারীরা রাতের আঁধারে ওই পুকুরগুলোতে অতিরিক্ত চুন ফেলে পরিকল্পিতভাবে মা মাছগুলো মেরে বাইরে বিক্রি করে দিয়েছেন। দরপত্র ছাড়াই কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন ইচ্ছামতো সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ, পুকুরের সংস্কারসহ চারটি ৪০ লাখ টাকার কাজ করিয়েছেন। এ ছাড়া গত ১০ মার্চ মৎস্য অধিদপ্তর থেকে মৎস্য ও মৎস্যজাত দ্রব্যের (ওষুধ) জন্য রায়পুরের এ কেন্দ্রে চার লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। কোনো দরপত্র আহ্বান ছাড়াই প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ দ্রব্য কিনেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন মৃধা বলেন, দেশের অন্যতম রায়পুর মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান। এখানে উৎপাদিত রেণু-পোনা উন্নতমানের হওয়ায় সারা দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সরকার এদিকে একটু নজর দিলে মৎস্য খাতে আরো বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। বেকার সমস্যা দূরীকরণেও এটি ভূমিকা রাখতে পারে।

রায়পুর মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই। রেণু বিক্রির রসিদে টাকার অঙ্কের গরমিল থাকায় কামাল উদ্দিনকে শোকজ করা হয়েছে। জনবল সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এটি নিরসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। ’

মৎস্য বিভাগের কুমিল্লা বিভাগীয় উপপরিচালক ড. কাজী ইকবাল আজম বলেন, ‘রায়পুর মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

সৌজন্য: কালেরকন্ঠ

লক্ষ্মীপুর নিউজ আরও সংবাদ

গরমের শুরুতে রামগতিতে ভয়াবহ লোডশেডিং, ভোগান্তিতে উপকূলের গ্রাহক

রামগতিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৮ পরিবারের বসতঘর পুড়ে ছাই

কমলনগরে চার্টার্ড লাইফের মৃত্যু বীমা দাবি চেক হস্তান্তর

কমলনগরে হিফজুল কুরআন ও ইসলামী সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন

রায়পুরে কলেজছাত্রকে অপহৃরনের ঘটনায় দু’জন আটক

রামগতিতে শিক্ষার্থীদের মাঝে কোডেকের স্কুল ব্যাগ বিতরণ

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Chief Mentor: Rafiqul Islam Montu, Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu.
Muktijudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794 822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com