তাবারক হোসেন আজাদ: লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে শহরসহ ১০টি ইউনিয়নে ৩৫টি হাট-বাজার রয়েছে। এসব হাট-বাজারে পশু, পান, মাছ ও বিভিন্ন পরিবহনে সরকার ঘোষিত টোল বা খাজনা আদায়ের নিয়ম না মেনে নিজেদের ইচ্ছামত চারগুণ হারে রশিদ ছাড়াই টোল আদায় করেছেন ইজারাদাররা। শুক্রবার, শনিবার, রবিবার বিভিন্ন হাট-বাজারে ঘুরে ইজারাদাররা অনিয়ম করে টোল আদায় করেছেন সরেজমিনে দেখা যায়। এতে ইজারাদারদের অতিরিক্ত টোল আদায়ের কারণে ফসল উৎপাদনকারী কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
সুত্রে জানা যায়, প্রতি বাংলা বছরের শুরুতে বিভিন্ন হাট বাজারের ইজারা গ্রহন করে ইজারাদারগণ। এর মধ্যে রয়েছে মাছ বাজার, তরকারী বাজার, কৃষি বাজার এবং দৈনন্দিন বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রাবিরতি ইত্যাদি। সরকারের ইজারা নীতিমালা অনুসারে কোন ইজাড়াদার ওই বাজার সাব ইজারা দিলে তার মূল বাজারের ইজারা বাতিল হয়ে যাবে। সরকারের এই নিয়ম মেনে ইজারাদাররা দলিলে স্বাক্ষর ও করে থাকেন।
শুক্রবার ভোরে শহরের নতুন বাজার মহিলা কলেজ সংলগ্ন পান হাটা গিয়ে দেখা যায়, প্রতি শুক্রবার ও সোমবার প্রায় দু’শত কৃষক, বর্গাচাষি ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে পান হাট বসে। এখানে হাইমচর, আলগি, জনতা বাজার, গন্ডামারা, হায়দরগঞ্জ, ঝাউডুগি, উদমারা, বাংলা বাজার এলাকার কৃষক ও চাষিরা পান বিক্রি করতেন আসেন। এ সময়ে গত ১ বছর ধরে রশিদ ছাড়াই বিক্রেতার কাছ থেকে ১০০ টাকা ও ক্রেতার কাছ থেকে ২০-৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। প্রতি বাজারের দিন প্রায় ১০ হাজার বিড়া (১ বিড়া ৭২টি পান থাকে) বিক্রি হয়।
প্রায় সময় বিভিন্ন হাট বাজারে কৃষকদের সাথে ইজাদারদের বাকবিতন্ডা পাশাপাশি প্রায় বাজারে প্রভাবশালী ইজাদারগণ কৃষক ও বাবসায়ীদের শরীরে হাতও তুলতে দিধাবোধ করছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনের সময় রায়পুর পৌর শহরের নতুন বাজার পান হাটা, কাঁচা বাজার, মোল্লার হাট, খাসের হাট, সুনামগঞ্জ, জনতা বাজার, হায়দারগঞ্জ বাজার, মীরগঞ্জ বাজার, হাজীমারা বাজার, উদমারা, রাখালিয়া বাজার, বাংলা বাজার সহ উপজেলার ৩৫টি বাজারে ইজাদারদের পক্ষ থেকে নতুন বছরে টোল আদায়ের মূল্য তালিকা সম্বলিত কোন সাইন বোর্ড বাজারে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার প্রায় প্রতি হাটবাজারে সরকারের এ নীতি অমান্য করে হাট বাজার সাব ইজারা হচ্ছে। আবার রাজনৈতিকভাবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় বলেও জানা যায়। পরে মুল ইজারাদারগণ প্রতিটি বাজার টুকরো টুকরো করে একাধিক ইজারাদারদের কাছে বিক্রি করে। শেষে ওইসব সাব ইজারাদারগণ নিজেদের ইচ্ছা মতো টোল বা খাজনা আদায় করে থাকেন। সরকারের ঘোষিত ৩৭টি পণ্যের মধ্যে গৃহস্থের জন্য মাত্র ১১টি পণ্যের টোল বিধান থাকলেও বাকি ২৫টি পণ্যের জন্য কোন টোল প্রদান করতে হয় না। কিন্তু ইজাদাররা কোন পণ্য থেকেই টোল গ্রহণ বাদ দিচ্ছে না।
গৃহস্থের যে কোন পণ্য বাজারে তুললেই ১০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত টোল আদায় করা হয়। সরকারী টোল আইন অনুযায়ী গৃহস্থের জন্য সর্বোচ্চ হাঁস,মুরগি , কবুতর দোকান প্রতি ৬ টাকা খাজনা দিতে হবে। বাস্তবে প্রতি হাঁস, মুরগি থেকে শতকরা ৩০Ñ৪০ টাকা খাজনা আদায় করা হয়ে থাকে। নারিকেল জোড়া ও দুধ প্রতি কেজি ১ টাকা। তরকারী শাক-সবজির দোকান ৩ টাকা, ফল শতকরা ২ টাকা, মাছ দোকান ৩ টাকা, ধান মণ প্রতি ৫ টাকা, ডিম দোকান প্রতি ৫ টাকা, বুট-বাদাম-সয়াবিন দোকান প্রতি ৫ টাকা টোল আদায় করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না।
সরকারের বাজার ইজারা আইন অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দোকান প্রতি ২ টাকা থেকে ১৫ টাকা, ঘর দোকান একমাত্র মাংসের দোকান ৫০ টাকা টোল আদায়ের বিধান থাকলেও ইজাদাররা দোকান প্রতি ১০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা আদায় করে থাকে।
শুক্রবার পান হাটা গৃহস্থ আহছান উল্যা, বিক্রেতা নারায়ন দাস, হাছান আলী ও আতিক অভিযোগ করে বলেন, আমরা প্রায় দু’শ খুচরা ও প্রাইকারী ব্যবসায়ী প্রতি শুক্র ও সোমবার পান বিক্রি করতে আসি। খাজনা আদায় কারী সুলতান মিয়া গত ১ বছর ধরে রশিদ ছাড়াএ বিক্রেতাদের কাছ থেকে ১০০ টাকা ও ক্রেতাদের কাছ থেকে ৫০ টাকা হারে জনপ্রতি হারে আদায় করছেন। প্রতিবাদ করলে তারা মারধরে তেড়ে আসে। তবে সুলতান মিয়া বলেন, পৌরসভার মেয়র খোকন সাহেবের থেকে ৫ লক্ষ টাকা বাজার কিনেছি। পূর্বের খাজনা আদায়কারীদের মত তিনি রশিদ ছাড়া খাজনা আদায় করছেন বলে শিকার করেন। সরকারী মূল্যে খাজনা আদায় করলে আমাদের অর্ধেকও উঠবে না।
এছাড়া বাজার ইজাদারদের বাজার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্ব থাকলেও তারা তা পালন করছে না। বাজার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের মাসে প্রায় ১০০ টাকা আদায় করছে বণিক সমিতি। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ইজাদারা বছরের পর বছর এ রকম ইজারা গ্রহন করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা কৃষক বা ব্যবসায়ীরা পাচ্ছে না।
রায়পুর পৌরসভার সচিব আব্দুল কাদের ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা রীনা রানি রায় বলেন, বাজারে খাজনা আদায়ের পণ্যের তালিকা আমাদের কাছে নেই। ডিসি অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। পান বাজারে বিক্রেতার পাশাপাশি ক্রেতার কাছ থেকে খাজনা আদায় হচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি মেয়র সাহেবকে জানানো হবে।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিল্পি রানী রায় বলেন, টোল বা খাজনা আদায়ের তালিকা প্রত্যেকটি ইজাদারের কাছে আছে। কেউ যদি এর বেশি গ্রহন করে থাকে এরকম কোন অভিযোগ আমাদের কাছে আসলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
0Share