মোঃ ওয়াহিদুর রহমানঃ রায়পুর উপজেলার সোলাখালী ব্রীজ সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীর পাড় ঘেঁষে ছোট একটি দোকানে মনোযোগে কাজ করছেন প্রবীণ খায়রুল। লোকজন তাকেঁ খায়রুল চাচা নামেই ডাকে।১৯৬৫ সাল । তখন তিনি যুবক। পেশা হিসেবে বেঁচে নিয়েছেন ঘড়ি মেরামত। এখন বুড়ো জীবনেও প্রয়োজনের তাগিদে সে পেশা।
সময় ঠিক করে দেয়ার একমাত্র মাধ্যম ঘঁড়ি।এক সময় বিশ্ব কাঁপানো সিকো, কেসিও, কিএন্ডকিউ, কোয়ার্টার, রোলাক্স, ডমিনো ব্রান্ডের ঘড়ি জগৎ জুড়ে বিখ্যাত ছিলো। আজকাল সচরাচর সবার হাতে ঘড়ি না দেখলেও ৯০ এর আগে উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিরাই ঘড়ি ব্যবহার করতেন।
শিক্ষিত ব্যক্তির ঘড়ির ব্যবহার দেখে প্রবাসে থাকা আপনজনের কাছে জনপ্রিয় চাওয়ার মাধ্যম হয়ে উঠেছিলো ব্রান্ডের ঘড়ি। তবে এই ঘড়ি দেশে আসলে ইচ্ছে করলেই ব্যবহার করা যেতো না। তখনই হাজির হতেন রায়পুর বাজারের ৫২ বছর ধরে ঘড়ি মেকার পরিচিত পাওয়া খায়রুল বাশারের কাছে। ঘড়ির চেইন ছোট করা, ব্যাটারি লাগানো, পানি ঢুকলে বের করে দেয়া, মেশিন নষ্ট হলে ঠিক করে দেয়া সহ নানান কাজ তার হাত দিয়েই মেরামত হতো জানালেন ৭২ বছর বয়সী খায়রুল বাশার।
স্বাধীনতার যুদ্ধের পরে রায়পুর উপজেলার সামনে দোকান নিয়ে শুরু করেছিলেন তার এই ঘড়ি মেরামতের দোকান। স্বাধীনতার এত বছরে দেশ, মানুষ পাল্টে গেলেও পাল্টায়নি তার ব্যবসার ধরন। সৎ পথে থেকে এখনো উপার্জন করে যাচ্ছেন নিয়মিত। ৭১ বছর বয়সে তার এই সহজ – সরল জীবন দেখে অনেকেই উপহাস করেন। যদিও তার এই ক্ষুদ্র দোকান অনেক তরুনের কাজে সততার অনন্য উদাহরন হিসেবে বিবেচিত হয়।
রায়পুর ১০ নং ইউনিয়ন এর বাসিন্দা জসিম খাঁন বলেন, ছোট থেকেই দেখছি খায়রুল কাকাকে।কত সুযোগ আসে মানুষের জীবনে কিন্তুু তার ছিলোনা সেগুলোর প্রতি লোভ – লালসা। এই মানুষটি ছোট – বড় সকলের কাছে প্রিয়। নামাজ পড়েন, সবার সাথে ভালো ব্যবহার করেন। ৭২ বছর বয়সী মোঃখাইরুল বাশার এর সাথে আলাপকালে জানান, তার বাড়ী ফরিদগঞ্জের ১০ নং গোবিন্দপুর ইউনিয়নে। বিয়ে করেছিলেন রায়পুরে। তৎকালীন সময় রায়পুর বাজার ছিলো জনপ্রিয়। তবে অনেক প্রবাসী থাকায় এই অঞ্চলের অধিকাংশ নারী, পুরুষ ছিলেন সুন্দরের প্রতি আকৃষ্ট। তখন ঘড়ির প্রচলন খুব কম ছিলো। এক একটি ঘড়ির দাম ছিলো ১৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত। সবার পক্ষে ঘড়ি কেনা সম্ভব হতো না। যারা নতুন ঘড়ি নিয়ে দেশে আসতো তারা ঘড়ির সমস্যা জনিত মেরামত করতে আমার ছোট দোকানে আসতেন। তখন থেকেই আমার পথচলা শুরু। যেই ভাবে আছি তাতে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক সন্তানদের পড়াশোনা করিয়েছেন কষ্ট করে। এখন তারা ঢাকায় চাকুরী করে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি।এখানে শেষ খায়রুল চাচাদের জীবন সংগ্রাম।
0Share