সারোয়ার মিরন: গত কয়েক দিন ধরে লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে জাহাজ পাওয়া নিয়ে হৈচৈ ব্যাপার ঘটে যাচ্ছে। সামাজিক প্রচার মাধ্যমে হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে মাটির নিচে জাহাজ পাওয়া সংবাদ। রামগতি উপজেলার চর রমিজ ইউনিয়নের চর আফজল গ্রামে (আজাদনগর স্টীল ব্রীজ টু রামগতি বাজার আঞ্চলিক সড়কের চৌমুহনী বাজার নামক স্থান) নতুন বাড়ি তৈরি করতে পুকুর খনন কালে কথিত জাহাজ পাওয়া গেছে!!! পত্র পত্রিকা এবং লোক মুখে ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের পর অবশেষে এ প্রতিবেদক সরেজমিনে শুক্রবার (১৬ মার্চ) বিকেলে গেলাম ঘটনাস্থল দেখতে। চৌমুহনী বাজার নেমে একজনকে জিজ্ঞাসিতেই বললেন-একটু সামনে যান তাহলেই দেখতে পাবেন শত শত মানুষ আর মটরসাইকেল।
আরো পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে পুকুর খনন করতে জাহাজের মাস্তুলের সন্ধান !
মূল রাস্তা থেকে আনুমানিক তিনশত মিটার পূর্ব পাশে শখানেক মানুষ এবং ডজন খানেক মটর সাইকেল পার্ক করা। বেশ কিছু মানুষ পথে দিয়ে আসছে যাচ্ছে। রবি শষ্যের ক্ষেতের আল এবং কৌনিক পথে হেঁটে গেলাম ঘটনাস্থলে। সময় লাগলো প্রায় মিনিট পাঁচেক। ইতি মধ্যে পথে দেখা কয়েকজনের কাছে জানতে চাইলাম আসলে ঘটনা কি!!! কেউই সঠিক ভাবে বললেন না!! সবার একই উত্তর গিয়ে দেখে আসেন।
ফসলী জমিতে নতুন বাড়ির করার জন্য মাটি কাটা হচ্ছে। চারিদিকে নতুন মাটির স্তুপ। মাটি কাটার জন্য ছোট্ট একটা পুকুর। সেই পুকুর ঘিরেই শ খানেক মানুষ। সময় আনুমানিক বিকেল চারটা। দশ ফিটের মতো গভীর পুকুর। নতুন খননকৃত তলায় ফুট তিনেকের মতো দৃশ্যমান আলোচিত এবং কথিত সে জাহাজ।
আসলে জাহাজ!!! না পাঠক সত্যিকার জাহাজ ছিলো না সেটা। প্রাথমিক ভাবে বোঝা যাচ্ছে এটা লোহা কিংবা স্টীলের চোঙ্গার অংশ বিশেষ। লোক মুখে যেটা জাহাজ জাহাজ বলে শোরগোল উঠেছে। তবে আমার দেখা থেকে আমি বলতে পারি-এটা কোন ইটভাটার ধোয়া ওঠার চোঙ্গার অংশ বিশেষ। নয়তো ছোট লঞ্চ কিংবা ফেরির চ্যালেঞ্জার পাইপের অংশ বিশেষ হবে। হতে পারে সেটা লোহা বা স্টিলের কালভার্টেরও অংশ বিশেষ। চোঙ্গার ভেতর মাটি ভরাট। এটির ব্যাস হবে আনুমানিক পাঁচ ফিটের মতো। পুরুত্ব হবে ছয় সেমির মতো। প্রায় এক ডিসিমেল আয়তনের পুকুরের তলায় বিভিন্ন স্থানে বোরিং করার বেশ কয়েকটা ফুটো দেখলাম।
উপস্থিত স্থানীয় কয়েকজনের কাছে জানতে চাইলে জানা যায়, তিন চারদিন আগে স্থানীয় নলকূপ মেস্ত্রিরা বেশ কয়েক জায়গা দিয়ে বোরিং করেছে। বোরিং পাইপ পনের বিশ ফুট গিয়ে আটকে যায়। নিচে আর যায়না। কথা বললাম উপস্থিত আরো কয়েকজনের সাথে। ঘটনার তিনদিনের মাথায় রামগতি উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তাসহ একটা টিম গিয়ে খনন কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলেন। এবং বিষয়টা একটা বিশেষজ্ঞ টিম দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার কথাও বলেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় লোকজনও পরিদর্শন করেছেন ঘটনাস্থল।
স্থানীয় এক বৃদ্ধের সাথে আলাপ করেছি বিষয়টা নিয়ে। তিনি ঐ এলাকায় আবাস পেতেছেন প্রায় ষাট বছর হবে। আর উনার বয়স পঁচাশির কাছাকাছি। উনি জানিয়েছেন, মেঘনার ভাঙ্গন কবলিত আলেকজান্ডার ইউনিয়ন (আসলপাড়া) নিবাসী এক ব্যক্তি বাড়ি করার উদ্দেশ্যে জমিটি কিনেছেন তাঁর কাছ থেকে। বায়না হলেও জমির পুর্ন দাম এখনও পরিশোধ করেননি ক্রেতা। হয়নি রেজিস্ট্রি কাজও। এমতাবস্থায় তিনিও শংকিত এর ভবিষ্যত নিয়ে। বৃদ্ধা আরো জানান, এখানে এক সময় (প্রায় দুইশো বছর) আগে নদী ছিলো। হয়তো কোন এক সময় এখানে জাহাজ কিংবা এমন কোন বস্তু ডুবে থাকতে পারে। পরবর্তীতে চর পড়লে মাটি চাপা পড়ে যায়। তিনি এখানে জাহাজ না কি অন্য কিছু তা নিশ্চিত করে বলতে পারেন নি।
একটা বিষয়ে এলাকাবাসী, স্থানীয়রাসহ দেখতে আসা সকলেই একমত এবং তারা মনে করেন এটি জাহাজের চ্যালেঞ্জার পাইপ। এবং নিচে অবশ্যই জাহাজ আছে। স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেনি ও পেশার মানুষের মধ্যে বেশ উৎফুল্লতা দেখা গেছে। তারা মনে করেন মাটির নিচে যাই-ই থাকুক না কেন অল্প সময়ে এলাকাটি পরিচিতি পেল। কোন কারনে জাহাজ পাওয়া গেলে তো এ আনন্দের মাত্রা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাবে। সময় গড়াতে থাকে। উৎসুক জনতার ¯্রােতও বাড়তে থাকে।
বাস্তায় চলাচলকারী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে দেখতে আসছেন জাহাজ!! অনেকে পরিবার পরিজন নিয়েও আসতে দেখা গেছে। মোদ্দা কথা, এ যেন এক পিকনিক স্পট। ঘটনাস্থলের পাশেই বেশ কয়েকটি অস্থায়ী টং দোকান এবং বেশ কয়েকজ হকারও দেখা গেছে।
আমরা কথা বললাম এদের সাথেও। শরবত বিক্রি করা একজনের কাছে জানতে চাইলাম, কেমন চলছে বেচা-বিক্রি? তিনি জানান দৈনিক সাত আটশ টাকার মতো বিক্রি হচ্ছে। তবে ছুটির দিন গুলোতে লোকজন অনেক বেশি আসেন বলে বিক্রির পরিমান বেড়ে যায়। এখানে আসা মানুষদের মাঝে দেখতে আসার সময় বেশ কৌতুহলী অবয়বে দেখা গেলেও যাওয়ার সময় হতাশ হয়েই ফিরছেন।
আফসোস করতেও দেখা গেছে কয়েকজনকে। অনেক চেষ্টা করেও জমির বর্তমান মালিকের খোঁজ নেয়া যায়নি। বিষয়টির আশু সমাধান জরুরী। তা না হলে গুজবের ডালপালা আরো ব্যাপকতা লাভ করার আশংকা রয়েছে। ইতিমধ্যে টাকার বিনিময়ে মটরসাইকেল রাখার স্ট্যান্ড করা নিয়ে গন্ডগোলও পাকিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এখনও কোথাও টাকা দিতে হয় না।
তাছাড়া নদী ভাংগন কবলিত পরিবারটি যত দ্রুত বাড়ির কাজ সম্পন্ন করার সুযোগ পাবেন ততই তার মাথা গোঁজার আশ্রয়স্থল মিলবে। রামগতি উপজেলা প্রশাসনসহ যথাযথ কৃর্তপক্ষের কাছে নিবেদন অতিদ্রুত জাহাজ অধ্যায়ের সমাপ্তি দরকার।
0Share