সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর বৃহস্পতিবার , ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মেঘনার জেলেরা বেপরোয়া

মেঘনার জেলেরা বেপরোয়া

মেঘনার জেলেরা বেপরোয়া

 

আতোয়ার রহমান মনির:: নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইলিশ শিকারিরা। জেল-জরিমানা এমনকি সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই অবাধে চলছে জাটকা নিধন।জেলেরা প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিয়ে ব্যস্ত হয়ে ইলিশ ধরার মহোৎসব চালাচ্ছে দিনে ও রাতে। নদীতে অবাধে জাটকা ইলিশ শিকারে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার জেলেসহ অন্য এলাকা থেকে আগত কয়েক হাজার ভাড়াটিয়া জেলে। অপরদিকে কিছু অসাধু মাছ ব্যবসায়ীরা কৌশল পাল্টে বিভিন্ন হাটবাজারে দেদার বিক্রি করছে নিষিদ্ধ জাটকা ইলিশ। অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ব্যবসায়ীরাও। আইনি ঝামেলা এড়াতে জাটকা বিক্রির ও ধরার কাজে ব্যবহার করছেন শিশুদের। তারা বলছেন ‘এক্কেবারে বড় ইলিশের স্বাদ, তবে সাইজে ছোট, দামও একটু কম’-এভাবেই খরিদ্দারদের ডেকে ডেকে শিশুরা কমলনগর ও রামগতির বিভিন্ন বাজারগুলোসহ বাড়ী বাড়ী গিয়ে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে জাটকা। এনিয়ে হতাশ স্থানীয়রা।

আড়তদাররা জানান, নির্দিষ্ট সময়ে জেলে খাদ্য সহায়তা না দেওয়ায় তারা ইলিশ রোধে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বর্তেও বেশি দাম পাওয়ার আশায় কোন নির্দেশ মানছেনা এখানকার জেলেরা। তাই তারা দিনে ও রাতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রজনন মৌসুমে জাটকা শিকারে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অভিযোগ রয়েছে ,বাংলা বর্ষবরণে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে জেলেরা মেঘনা নদীতে ইলিশ মাছ শিকারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর নিষেধাজ্ঞা মেনে নদীতে নামতে না পেরে মেঘনার জাটকা ইলিশ ধরা বন্ধের প্রতিবাদে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ক্ষুদ্র মৎস্য জীবি সমিতির নেতাকর্মীসহ স্থানীয়রা। আর কোস্টগার্ড ও মৎস্য কর্মকর্তারা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ইলিশ ধরা বন্ধ করতে তাদের লোকজন কম হলেও অভিযান চলছে দিনে ও রাতে।

জানা গেছে,লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনাল এলাকার ১শ’ কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষিত এলাকায় ১ মার্চ-৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও জেলেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করছে।

লুধুয়া ঘাট,বাতিরঘাট,মতিরহাট,পানির ঘাট,মোল্লারহাট,মজুচৌধুরীরঘাটসহ আরো কয়েকটি এলাকায় মেঘনা নদীতে জেলেরা মাছ শিকার করে গোপনে বিক্রি করছে। পরে এসব মাছ নদী পথে ঢাকা,চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে দেয় তারা।

রামগতির আলেকজান্ডারের মেঘনা তীরবর্তী চর গোসাই গ্রামের জেলে নিজাম জানান,্এখন নিষিদ্ধ সময়। সরকারি বরাদ্দের চাল না পেলেও তিনি মেঘনায় মাছ ধরতে যাননি। গত বছর নিষিদ্ধ সময়ে নদীতে না যাওয়ায়, ভাল ইলিশ দেখেছিলেন তিনি। এ বার যে হারে নদীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইলিশ শিকারিরা, তাতে তার মনে হচ্ছেনা ভরা মৌসুমে নদীতে ইলিশ থাকবে না।

রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী এলাকার মৎস্য আড়ৎদার জয়নাল আবদীন দেওয়ান জানান,নদীতে মাছ ধরা ও ক্রয় বিক্রয়ে এখন নিষেধাজ্ঞা থাকায় মৎস্য আড়ৎ গুটিয়ে রেখেছেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, মৎস্য অধিদপ্তর ও কোষ্টগার্ড এসময়ে নামমাত্র নদীতে অভিযান চালিয়ে কিছু নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল,জেলেসহ ইলিশ মাছ আটক করে। পরে জেল জারিমানা দিয়ে আবার ছেড়ে দেয়া হয় জেলেদের। উচ্ছেদ অভিযানে উচ্ছেদ ও বন্ধ করা হয়নি আড়তসহ বরফকলগুলো।

ক্ষুদ্র মৎস্য জীবি সমিতির নেতাকর্মীদের ও স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে তারা ১ মার্চ থেকে মেঘনা নদীতে মাছ শিকার বন্ধ রেখেছেন।তা রাখলে লুধুয়া মাছঘাটের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী (আড়তদার) খুলনা অঞ্চল থেকে ট্রলারসহ জেলে ভাড়া করে এনে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বেহুন্দি জাল (নেট জাল) দিয়ে অবাধে জাটকা (ছোট ছোট ইলিশের পোনা) শিকার করেন। তাদের দাবি, এভাবে জাটকা শিকার চলতে থাকলে মেঘনা ইলিশ শূন্য হয়ে পড়বে। যে কারণে, তারা দ্রুত জাটকা শিকার বন্ধের দাবি করে লক্ষ্মীপুর এলাকায় কোস্ট গার্ড ফোর্স পরিবর্তন করে নতুন ফোর্স পাঠিয়ে মেঘনায় জাটকা বন্ধে সরকারের প্রদক্ষেপ আরো তৎপরতা বৃদ্ধিরআহবান জানান।

মেঘনা নদীতে দেখা যায়,মেঘনা নদীর রামগতি ও কমলনগরের মতির হাটসহ বাতির খাল এলাকায় নদীতে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে জেলেরা জাল ফেলে ইলিশ ধরছেন। চড়া দামে ক্রয় করে দ্রুত প্যাকেজিংয়ে দিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় মতির হাট ও বাতির খাল এলাকায় মেঘনার পাড়ে গড়ে উঠা শতাধিক মাছ ক্রয় বিক্রয় কেন্দ্র আড়তে। বড় সাইজের ইলিশ চলে যাচ্ছে ঢাকা-বরিশালসহ দেশের বড় বড় শহরে। তবে ইলিশের কমতি নেই স্থানীয় বাজারগুলোসহ গ্রাম্য হাটগুলোতে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন আড়তদার বলছেন কোস্ট গার্ড ম্যানেজ ম্যানেজ থাকায় তারা অভিযানে নামার আগেই তাদের কে টেলিফোন করে জানিয়ে দেয়া হয়। তাই কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই বিক্রিতে নেই তাদের কোন রকম জামেলা। তাই কমলনগরের মতির হাটের পার্শ্বে একটি বাগানে চাউল রাখার চট বসিয়ে এবং লুদুয়া মাছঘাটে একই অবস্থাসহ বাতির খাল এলাকায় ভোরে ও সন্ধার পর ক্রেতা-বিক্রেতার জাটকা ঢাক তুলে বিক্রি করছে নিয়মিত। একই ভাবে আড়ৎ খুলে বসেছে রামগতির টাঙ্কর খাল,আলেকজান্ডার,হেতনার খালসহ হাজিমারা ও মতির হাট এলাকায়।

সদর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, প্রতিদিনই নদীতে মৎস্য বিভাগের লোকজন অভিযান পরিচালনা করছেন। লোকজন কম থাকায় অভিযানে সিপ্ট নিতে এর ফাঁকে কিছু জেলে নদীতে মাছ শিকার নামছেন।পরে ওই জেলেরা ধরা পড়ছেন। এ পর্যন্ত সদর উপজেলায় ৪ জনের জেলসহ ৪৩ জন জেলেকে অর্থদন্ড দিয়ে সাজা প্রদান করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ৩৩ টি নৌকা। অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

কমলনগর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস জানান,অভয়াশ্রম এলাকায় সরকার ১ মার্চ থেকে দু’মাস সকল প্রকার মাছধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে মৎস্য বিভাগ ও কোস্টগার্ড যৌথ অভিযান পরিচালনা করছেন। জাল পুড়াচ্ছি। জেলেকে জেল জরিমানা করা হচ্ছে।

এদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম মহিব উল্যাহ জানান, বিচ্ছিন্ন কয়েকটি স্থানে কিছু জেলে মাছ শিকার করতে পারে বলে স্বীকার করেন মৎস্য কর্মকর্তা। নদীতে বাড়ানো হয়েছে পুলিশ ও কোষ্টগার্ডের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান। কেউ যেন মাছ শিকার করতে না পেরে সে দিকে নজর রয়েছে জেলা মৎস্য বিভাগের। এছাড়া আইন অমান্য কারী জেলেদের ধরতে ১শত ২৪ টি অভিযানে ৫৭ জন জেলেকে ২ লাখ৩৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জেল দেওয়া হয়েছে ১৩ জেলেকে। এছাড়া ৩ লাখ ৭০ মিটার জাল, বিহিন্দ মাছ ধরার সামগ্রী জব্দ করে বিনষ্ট করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ৪২টি মাছধরার নৌকা। এছাড় খুব শিগগিরই ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, কোস্টগার্ডে সমন্বয়ে যৌথ অভিযান চালানো হবে বলে জানান তিনি।

লক্ষ্মীপুর নিউজ আরও সংবাদ

রামগতিতে দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত

সাংবাদিক জিয়া চৌধুরীর বাবা মাহাবুবের রহমান আর বেঁচে নেই

রামগতিতে আদালতের স্থিতাবস্থা মানছেন না অবৈধ ইটভাটার মালিকপক্ষ

গরমের শুরুতে রামগতিতে ভয়াবহ লোডশেডিং, ভোগান্তিতে উপকূলের গ্রাহক

রামগতিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৮ পরিবারের বসতঘর পুড়ে ছাই

কমলনগরে চার্টার্ড লাইফের মৃত্যু বীমা দাবি চেক হস্তান্তর

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Ratan Plaza(3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com