তাবারক হোসেন আজাদ, রায়পুর: মাছ চাষের নামে ডাকাতিয়া নদীর লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী, উত্তর চরবংশী, উত্তর চরআবাবিল, দক্ষিণ চরআবাবিল, ইউনিয়ন অংশে প্রায় ৮০ একর এলাকা জবরদখল করে নিয়েছেন ক্ষমতাশীন দলের স্থানীয় ১০ প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। এরা হলেন মোল্লারহাট এলাকার আ’লীগ নেতা শাহজাহান মোল্লা, মোহাম্মদ আলী মোল্লা, জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা, মান্নান সরকার, হায়দরগঞ্জ এলাকার বাবুল বেপারী, নাছির মেম্বার, মাঈন উদ্দিন মোল্লা, শ্রমিকলীগের আহ্বায়ক মানিক সরদার, আলী গোমস্তা ও হেলাল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতাধীন এ নদীটি গত ৫ বছর ধরে দখল করে রেখেছেন তারা। মাছ চাষের নামে তারা সেখানে নানান প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে স্বাভাবিক পানি প্রবাহের গতিকে বাধাগ্রস্ত করে চলেছেন। দখল প্রতিরোধে পাউবোর কর্মকর্তাদের কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা চোখে পড়ছেনা। বরং তারা নিয়মিত দখলকারীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এছাড়াও কতিপয় ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে পাউবোর অর্ধশতক জমিতে অবৈধভাবে তোলা হয়েছে অর্ধ শতাধিক দোকান ঘর। ওই জায়গা ইজারার নামে একটি চক্র ইতোমধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে। পরিত্যক্ত ভবনগুলোতে দিন-রাত চলছে মদ, গাঁজা সেবনসহ নানান অনৈতিক কর্মকান্ড।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নদীটির হাজীমারার সন্নিকট থেকে মোল্লারহাট হয়ে লক্ষ্মীপুর অংশের কাছ পর্যন্ত এবং হায়দরগঞ্জ বাজার থেকে কাটা খাল চরভৈরবী হাইমচর পর্যন্ত কয়েকটি ভাগে ভাগ করে জবরদখল করা হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মোল্লা পরিবারের সন্তান শাহজাহান মোল্লা, জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা ও মোহাম্মদ আলী মোল্লা প্রায় ৫ বছর ধরে দখল করে নিজেদের কব্জায় নিয়েছেন। শাহজাহান ওয়ার্ড আ.লীগ সভাপতি ও ইউপি সদস্য। জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আ. রশিদ মোল্লার ছেলে। মোহাম্মদ আলী মোল্লা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, চর আবাবিল ইউনিয়নের ৪, ৫, ও ৬ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার ফাতেমার স্বামী শ্রমিকলীগ নেতা মানিক সরদার, আ’লীগ নেতা বাবুল বেপারী, নাছির মেম্বার, মাঈন উদ্দিন মোল্লা, আলী গোমস্তা ও হেলাল প্রমুখ। তারা মাছ চাষের জন্য নদীটির বিভিন্ন স্থানে শক্ত প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে বাঁধ দিয়েছেন। এগুলোর কারণে নদীর স্বাভাবিক পানি চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিন্ধকতার কারণে নানান স্থানে আটকে রয়েছে কচুরিপানা। যার ফলে গত ৫ দিনের ভারীবর্ষণের ফলে ৫ হাজার হেক্টরের ফসলি জমির পানি বের হচ্ছে না।
নদীর পাড়ের বাসিন্দারা জানান, বর্ষাকালে পানি অধিক থাকায় নদীর পানি ব্যবহার করা গেলেও শুস্ক মৌসুমে পানি দূষিত হয়ে যায়। মাছ চাষের জন্য সার ও ওষুধ প্রয়োগ করায় ওই সময়ে পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ওই ৩ প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে পাউবোর কর্মকর্তাদের কাছে একাধিকবার নালিশ করা হলেও তারা জবরদখলকারীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করছে না। লক্ষ্মীপুর অংশের ডাকাতিয়া নদীতে সদর উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে নদীটি দখল মুক্ত করলেও রায়পুরে এ ধরণের কোনো অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় দখলকারীরা দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এছাড়া পাউবোর ইজারা কার্যক্রম বন্ধ থাকার সুযোগে দখলকারীরা স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত পাউবো কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই এতোসব কান্ড করছে বলে তাদের দাবি।
ডাকাতিয়া দখলকারী ইউপি সদস্য ও আ.লীগ নেতা শাহজাহান মোল্লা ও শ্রমিকলীগ নেতা মানিক সরদারসহ অন্যারা বলেন, পূর্বে আমরা লীজ নিয়ে ডাকাতিয়া নদীতে মাছ চাষ করেছি। এখন কোনো লীজ নেই। মাছ চাষের জন্যই বিশেষ বাঁধ দেয়া হয়েছে। পাউবো চাইলে দখল ছেড়ে দেয়া হবে।
চরবংশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মিন্টু ফরাজী ও চর আবাবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শহিদ উল্লাহ বিএসসি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওয়াতাধীন রায়পুরের ডাকাতিয়া নদি ও সংযোগ খালগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীরা দীর্ঘদিন মাছ চাষের নামে দখল করে আছে। প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে আমাদের করার কিছুই নাই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বলেন, ২০১২ সনের পর থেকে ডাকাতিয়া নদীর ইজারা প্রথা বন্ধ রয়েছে। দখল মুক্ত করার জন্য মাইকিং করা হয়েছে এবং জন প্রতিনিধিদের কে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। ২/১ একদিনের মধ্যে অভিযান চালিয়ে দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
0Share