আতোয়ার রহমান মনির: বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট ও গ্যাস সিলিন্ডার বিস্টেম্ফারণ ও জনসাধারণের অসাবধানতার কারণে লক্ষ্মীপুরে গত এক বছরে ৯৭টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ৯৫ লাখ ৩২ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা ফায়ার সার্ভিস। গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা বাড়ায় ব্যবহারকারীরা শঙ্কিত। তবে স্থানীয়দের মতে, গত বছর দেড় শতাধিক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ইনসার্জ মোনেমবিল্লা জানান, লক্ষ্মীপুর ফায়ার স্টেশনে জনবসতির তুলনায় ফায়ার কর্মী সংকট রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন ও বাজারে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবক ফায়ার কর্মী তৈরি করা গেল অগ্নিকান্ডের ঘটনা কমবে।
লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলা, রামগতি, রামগঞ্জে ৩টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন রয়েছে।
এ ছাড়া কমলনগর ও রায়পুর উপজেলায় দুটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের কাজ চলছে। জেলা শহরে বি-ক্যাটাগরিতে ২৪ জন স্টাফ নিয়ে লক্ষ্মীপুর সদর, সি-ক্যাটাগরিতে ১৪ জন করে ২৮ জন ফায়ার কর্মী রয়েছে রামগতি ও রামগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে।
জেলা ফায়ার সার্ভিস ডিফেন্স সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলায় চুলার আগুনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ৭টি, বৈদ্যুতিক গোলযোগে ৪৪টি, সিগারেটের আগুনে ৭টি, খোলা বাতি ব্যবহারে ১টি, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্টেম্ফারণে ২০টি, ফিশ ফায়ারে ১৫টি, মশার কয়েল থেকে ৩টি। অনুন্নত রাস্তাঘাট, ফায়ার কর্মী সংকট, দূরত্ব বেশি হওয়ায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশি সময় লেগে যায় বলে সংশ্লিষ্টরা।
১৪ সেপ্টেম্বর সোমবার ভোররাতে কমলনগর উপজেলার মাস্টার বাজারে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পুড়ে যায় ৭টি দোকান। এতে ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। ২২ নভেম্বর বিকেলে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্টেম্ফারণে লক্ষ্মীপুরে পোদ্দার বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জিহাদী জানান, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্টেম্ফারণে বাজারের ছোট-বড় ২১টি দোকান পুড়ে গেছে। এতে দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বশিকপুর গ্রামের গৃহিণী মুন্নি আক্তার জানান, বাজার থেকে যে গ্যাস সিলিন্ডার এনে দেওয়া হয় তাতে লিক আছে কি-না বা কোনো সমস্যা আছে কি-না তা পরীক্ষা করা হয় না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত।
সদর উপজেলার পোদ্দার বাজারের ব্যবসায়ী রশিদ মোল্লা জানান, বাজারে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি ও উত্তর চর আবাবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদ উল্যা বিএসসি জানান, গত কয়েক বছরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অসাবধানতায় ১৫-২০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে হায়দরগঞ্জ বাজারে।
লক্ষ্মীপুর পৌর বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জানান, বাজারের বেশিরভাগ দোকানের বৈদ্যুতিক সংযোগের লাইন টেকনেশিয়ান দ্বারা পরীক্ষা করা হয় না। এতে এ বৈদ্যুতিক গোলাযোগে অগ্নিকান্ডে ঘটে।
লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিস ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক ফরিদ আহম্মেদ চৌধুরী জানান, বিদ্যুৎ সংযোগের আগে বিভাগের সঠিক তদারকি থাকলে অগ্নিকান্ডের ঘটনা কম হতো।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দীন চৌধুরী নয়ন জানান, জেলায় তিনটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন রয়েছে। সরকার প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে দুর্ঘটনা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
0Share