- জিল্লুর রহমান: বহু ক্ষেত্রেই অবহেলিত লক্ষ্মীপুরের এই জনপদ। এই জনপদের উন্নয়নে এখন পর্যন্ত সমন্বিত এবং কার্যকরি উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় নি। স্বাধীনতা উত্তর লক্ষ্মীপুরে বহু খ্যতিমান রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং আমলাদের আআবির্ভাব ঘটলেও, এলাকার উন্নয়নে তাঁরা মনোনিবেশ করেননি বলেই বর্তমান অনগ্রসর অবস্থা প্রমান করছে। অথছ, সামান্য একটু দৃষ্টি দিলেই লক্ষ্মীপুর হয়ে উঠবে দেশের অন্যতম সমৃদ্ধ জনপদ।
লক্ষ্মীপুরের আভ্যন্তরীণ কৃষি অর্থনীতি ও প্রবাসীদের রেমিটেন্স এই অঞ্চললের মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়ালেও, শিল্প ও কর্মসংস্থানের অভাব,যোগাযোগ ব্যবস্থার ত্রাহি অবস্থা, সর্বোপরি দক্ষিনের বিশাল অঞ্চল নদীগর্ভে বিলীন হওয়াকে প্রতিরোধ করতে না পারায় একটি পশ্চাদপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে পরিনত হচ্ছে লক্ষ্মীপুর।
বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় আমাদের দ্রুতই কিছু উন্নয়নমুলক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে হবে। এই ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সদিচ্ছার কোন বিকল্প নেই। জনগনকেও তাদের উন্নয়নে সোচ্চার হতে হবে। লক্ষ্মীপুরের উন্নয়নে নিন্মোক্ত ২০ দফা দাবী বাস্তয়বায়ন সময়ের দাবী বলে মনে করছি।
১. রামগতি-কমলনগরকে মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষার জন্য অনতিবিলম্বে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নযন বোর্ড প্রণীত ৬শ ৫০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ।
২. অতিশীঘ্র লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ-হাজীগঞ্জ-কচুয়া-গৌরীপুর জাতীয় মহাসড়ক বাস্তবায়ন (৪ লেনের সুবিধাসহ)।
৩. লক্ষ্মীপুর জেলায় নতুন রেল লাইন নির্মাণ (চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-চৌমুহনী-ফেণী রুটে)।
৪. রামগতিতে সমুদ্র বন্দর নির্মাণ এবং মজুচৌধুরীরহাটকে পূর্ণাঙ্গ আধুনিক নদীবন্দরে রূপান্তর।
৫. অনতিবিলম্বে লক্ষ্মীপুরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, সরকারী ক্যাডেট কলেজ ও মেরীন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ।
৬. লক্ষ্মীপুরে সরকারী মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠাকরণ এবং অতিশীঘ্র ১০০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রূপান্তর।
৭. আকর্ষণীয় পর্যটন অঞ্চল গড়া এবং ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন রোধে উন্নত বিশ্বের ন্যায় মেঘনা নদীর কূল ঘেঁষে চাঁদপুর-রায়পুর-লক্ষ্মীপুর-কমলনগর-রামগতি ৪ লেনবিশিষ্ট রিভার সাইড/রিভার ড্রাইভ মহাসড়ক নির্মাণ।
৮.ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ-মতলব-চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-মাইজদী-সোনাগাজী-মিরসরাই-সীতাকুন্ড-চট্টগ্রাম রুটে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সেস কন্ট্রোল এক্সপ্রেস ওয়ের (৬ লেন বিশিষ্ট) রুট বাস্তবায়ন।
৯. লক্ষ্মীপুর জেলায় বিদ্যমান বি’ ক্যাটাগরী জেলার পূর্ণাঙ্গ সুযোগ-সুবিধাসহ সরকারী অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক পদ সৃষ্টি এবং চন্দ্রগঞ্জ ও মজুচৌধুরীরহাট উপজেলা বাস্তবায়নপূর্বক এ’ ক্যাটাগরীতে উন্নীতকরণ (উলেখ্যঃ ২০০৬ সালে লক্ষ্মীপুর জেলাকে বি’ ক্যাটাগরীতে উন্নীত করা হলেও এখনও পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সরকারী প্রতিষ্ঠান ও পদ সৃষ্টি করা হয়নি)।
১০. লক্ষ্মীপুরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল/ ইপিজেড নির্মাণ ও শিল্প-কলকারখানা স্থাপন।
১১. লক্ষ্মীপর-বেগমগঞ্জ-ফেণী সড়ককে ৩০ ফুট প্রশস্তকরণপূর্বক অবিলম্বে জাতীয় মহাসড়কে রূপান্তর।
১২. লক্ষ্মীপুর-রামগতি মহাসড়কের নদীগর্ভে বিলীন আলেকজান্ডার-রামগতি অংশের ১৫ কি.মি. রাস্তা পুনর্নিমাণ এবং মহাসড়কটিকে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ ।
১৩. লক্ষ্মীপুর-রায়পুর-চাঁদপুর সড়কটিকে জাতীয় মহাসড়কে রূপান্তর এবং লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল জাতীয় মহাসড়কের লক্ষ্মীপুর-মজুচৌধুরীরহাট অংশকে চার লেনে রূপান্তরের পদক্ষেপ গ্রহণ।
১৪. লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল নৌ রুটে নিয়মিত ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থাকরণ এবং স্টীমার ও ফেরীর সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ।
১৫. লক্ষ্মীপুর পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন এবং যুগোপযোগী, পরিকল্পিত ও আধুনিক শহর প্রতিষ্ঠা যাতে অতিশীঘ্রই সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হতে পারে।
১৬. লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন, ইলিশ এবং নারিকেল ও সুপারি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন।
১৭. অতিশীঘ্র লক্ষ্মীপুরে আঞ্চলিক যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন।
১৮. লক্ষ্মীপুর-চাটখিল এবং রায়পুর-রামগঞ্জ সড়কটিকে ৩০ ফুট প্রশন্তকরণপূর্বক আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নীতকরণ।
১৯. লক্ষ্মীপুর বণিক সমিতিকে অনতিবিলম্বে লক্ষ্মীপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’তে রূপান্তর।
২০. পরিকল্পিত ও টেকসই উন্নয়নের নিমিত্তে লক্ষ্মীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠন।
সরকারের নিকট উন্নয়ন দাবীসমূহ পেশ ও দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ”আসুন সবাই মিলে এক হয়ে কাজ করি দেশ গড়ার শপথ নিয়ে উন্নত লক্ষ্মীপুর গড়ি।”
লেখক: সম্পাদক,দৈনিক সময়ের আলো।
0Share