সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
ভয়ানক দূর্যোগের নাম বজ্রপাত, বাড়ছে মৃত্যু ও ক্ষতি

ভয়ানক দূর্যোগের নাম বজ্রপাত, বাড়ছে মৃত্যু ও ক্ষতি

ভয়ানক দূর্যোগের নাম বজ্রপাত, বাড়ছে মৃত্যু ও ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর : বাড়ছে বজ্রপাতের ঘটনা, সেই সঙ্গে বাড়ছে মানুষ মৃত্যুর সংখ্যা। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এ মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। তাতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন দেশের সাধারণ মানুষ। সামান্য বৃষ্টিপাত বা ঝড়ো বাতাসেও ঘটছে বজ্রপাতের ঘটনা। আরবজ্রপাতজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিদিন। ঝড়-বৃষ্টির দিনে বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক ঘটনা স্বাভাবিক হলেও সম্প্রতি এর পরিমাণ বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। আর এই অস্বাভাবিকতার কারণ হিসেবে কালো মেঘের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। কালো মেঘ সৃষ্ঠির পেছনে বাতাসে নাইট্রোজেন ও সালফার গোত্রের গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন তারা। জলবায়ু পরিবর্তনের্ কারণেই এই গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

পরিবেশ অধিদফতরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, স্বাভাবিক বায়ুতে ৭৮ দশমিক শূন্য ৯ ভাগ নাইট্রোজেন, ২০ দশমিক ৯৫ ভাগ অক্সিজেন, দশমিক ৯৩ ভাগ আর্গন ও দশমিক শূন্য ৩৯ ভাগ কার্বন ডাই অক্সাইড এবং সালফারসহ সামান্য পরিমাণ অন্যান্য গ্যাস থাকে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঢাকার প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে ৬৪-১৪৩ মাইক্রোগ্রাম সালফার ডাই অক্সাইড বিদ্যমান। আর প্রতি ঘন মিটার বায়ুতে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড রয়েছে ২৫-৩২ মাইক্রোগ্রাম। যা স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।

এদিকে, এপ্রিল-জুন মাস কালবৈশাখী ঝড়ের মৌসুম হলেও বড় কোনো ঝড় বা বৃষ্টিপাত ছাড়াই সামান্য ঝড়ো বাতাসের সঙ্গেই ঘটছে বজ্রপাতের ঘটনা।ঝড়ো বাতাসের প্রভাবে দ্রুতগতির কালো মেঘের মধ্যে ঘর্ষণ ও সংঘর্ষের ফলে সৃষ্টি হওয়া ইলেকট্রনের প্রবাহ থেকেই বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাদা মেঘের উপাদানের অধিকাংশই জলীয়বাষ্প বা পানির কণা হয়। ফলে সাদা মেঘে ঘর্ষণের বা সংঘর্ষের ফলে যথেষ্ট ইলেকট্রন সৃষ্টি হয় না। কিন্তু কালো মেঘে নাইট্রোজেন ও সালফার গোত্রের গ্যাসের পরিমাণ বেশি থাকায় দ্রুত গতির কারণে এ সব যৌগিক গ্যাসের মধ্যে সংঘর্ষে প্রচুর পরিমাণ ইলেকট্রনের সৃষ্টি হয়। আর এ সব ইলেকট্রন বাতাসের জলীয়বাষ্পের মাধ্যমে ভূমিতে চলে আসে এবং সৃষ্টি হয় বজ্রপাতের।

শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে অতিমাত্রায় নাইট্রোজেন, সালফার ও কার্বন গ্যাসের নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এ সব গ্যাস মেঘের জলীয় কণার সঙ্গে মিশে যায়। এপ্রিল-জুন মাসে ঋতু পরিবর্তনের কারণে বাতাসে প্রচুর জলীয়বাষ্প সৃষ্টি হয়। ফলে স্বাভাবিক বায়ু প্রবাহের কারণে এ সব জলীয়বাষ্প উপরের দিকে উঠতে থাকে। এতে কালো মেঘের মধ্যকার ঘর্ষণে তৈরি হওয়া ইলেকট্রন বা বিদ্যুৎ এ সব জলীয় কণাকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে ভূমিতে চলে আসে।

কালো মেঘে থাকা যৌগিক গ্যাসগুলো রোদের তাপে এবং বাতাসের দ্রুতগতির কারণে প্লাজমা (বিক্রিয়ার অনুকূল) অবস্থায় থাকে। এতে সামান্য ঘর্ষণ বা সংঘর্ষে এ সব যৌগ গ্যাস পরস্পরের মধ্যে বিক্রিয়া ঘটায়। ফলে সৃষ্টি হয় প্রচুর পরিমাণ ইলেক্ট্রনের। মেঘের জলীয় কণায় এসব গ্যাসের পরিমাণ যত বাড়বে ইলেকট্রন বা বিদ্যুৎ সৃষ্টির পরিমাণও ততটা বাড়বে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আকাশে যে মেঘ তৈরি হয় তার ২৫ থেকে ৭৫ হাজার ফুটের মধ্যে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে বেশি। বজ্রপাতের গতিও প্রতি সেকেন্ডে ৬০ হাজার মিটার বেগে নিচে বা উপরের দিকে চলে যায়। ফলে এ পরিমাণ তাপসহ বজ্রপাত মানুষের দেহের ওপর পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু হওয়া স্বাভাবিক। বিশেষ করে বিকেলের দিকেই এ ধরনের মেঘ বেশি সৃষ্টি হতে দেখা যায়। অন্য সময়ে সংঘঠিত মেঘে বজ্র আওয়াজ থাকলেও বজ্রপাতের ঘটনা কম থাকে। সূর্যতাপ না থাকায় এবং ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে রাতের বেলায় বজ্রপাতের ঘটনা খুব কম হয়ে থাকে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বজ্রপাতের কারণ ও ফলাফল সংক্রান্ত কোনো গবেষণা হয়নি। তবে সম্প্রতি বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘মোবাইল ফোন ব্যবহার মানুষের ওপর বজ্রপাতের আশঙ্কা বাড়ায়। বজ্রপাতের সময় মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক্স ব্যবহার খুবই বিপজ্জনক। একজন মানুষের সঙ্গে যখন সচল মোবাইল বা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি থাকে, তখন তা একটি সার্কিট হয়ে যায়। ওই সার্কিটের মধ্য দিয়ে বজ্রপাতের বিদ্যুৎ প্রবাহ ভেতরে প্রবেশ করে।’

বজ্রপাতের স্থায়িত্বকাল এক সেকেন্ডের দশ ভাগের এক ভাগ। ঠিক এই সময়েই বজ্রপাতের প্রভাবে বাতাস সূর্যপৃষ্ঠের পাঁচ গুণ বেশি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে ওঠে চারপাশ। বজ্রপাত ভূমিকম্পের চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী। একটি বজ্রপাতে প্রায় ৫০ হাজার অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎশক্তি থাকে। অথচ বাসাবাড়ির বিদ্যুৎ চলে গড়ে ১৫ অ্যাম্পিয়ারে। একটি বজ্র কখনও কখনও ৩০ মিলিয়ন ভোল্ট বিদ্যুৎ নিয়েও আকাশে জ্বলে ওঠে।

বজ্রপাতের কারণ ও প্রকৃতি সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ কৌশল বিভাগের সাবেক প্রধান ও বর্তমান সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো: আবদুল মতিন বলেন, ‘প্রাকৃতিক ঘটনা হলেও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বজ্রপাতের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ভূমিতে বজ্রপাত ঘটার পেছনে অপরিকল্পিত মোবাইল নেটওয়ার্কের টাওয়ারও দায়ী।’

আবদুল মতিন বলেন, ‘মোবাইল টাওয়ারগুলো উচ্চতার কারণে বজ্রপাতের প্রথম শিকার হওয়ার কথা। কিন্তু আর্থ কানেকশন (ভূ-সংযোগ) ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এবং বজ্রপাতের বিদ্যুতের প্রবাহকে অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা বা প্রযুক্তি এ সব টাওয়ারে রয়েছে। একই সঙ্গে এ সব টাওয়ার অত্যধিক ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ফিল্ড (তড়িৎ চৌম্বকক্ষেত্র) সৃষ্টি করায় বজ্রপাতে তৈরি হওয়া ইলেকট্রনও টাওয়ারগুলোর দিকে আকৃষ্ট হয়। আর উচ্চপ্রযুক্তির কারণে বজ্রপাতের বিদ্যুৎ এ সব টাওয়ার কিছুটা ভূ-সংযোগের মাধ্যমে কমিয়ে ফেলে বাকিটা অন্যদিকে সরিয়ে দেয়। ফলে যত্রতত্র বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে।’

আবদুল মতিন আরও বলেন, ‘একেকটি বজ্রপাতের সময় প্রায় ৬০০ মেগা ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। বাসাবাড়িতে আমরা যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছি তার ক্ষমতা মাত্র ২২০ ভোল্ট। একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য মাত্র ১১০ ভোল্ট বিদ্যুতই যথেষ্ট।’ (উল্লেখ্য, ১ মেগা ভোল্ট=১০ লাখ ভোল্ট, এই হিসেবে একেকটি বজ্রপাতের সময় প্রায় ৬০ কোটি ভোল্ট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়)।

তথ্য সূত্র: দৈনিক সমকাল ২৬ এপ্রিল ২০১২,

ইণ্টারন্যাশনাল ফোরাম অন টনর্নেডো ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন ফর বাংলাদেশ

লক্ষ্মীপুর নিউজ আরও সংবাদ

মেঘনায় ৩০ জেলের জরিমানা

বলিরপোল বাজারে আগুনে পুড়লো ৮ দোকান: দেড় কোটি টাকার ক্ষতি

রামগতিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে কোটি টাকার ক্ষতি

মেঘনা নদীতে পৃথক দুটি ডাকাতি মামলার আসামী মঞ্জু গ্রেপ্তার

জাটকা নিধন বন্ধে মেঘনায় নৌ র‌্যালি

রামগতিতে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস অনুষ্ঠিত

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Chief Mentor: Rafiqul Islam Montu, Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu.
Muktijudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794 822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com