সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর বৃহস্পতিবার , ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিশ্ব নদী দিবসঃ ডাকাতিয়া নদী রক্ষায় প্রধান সমস্যা সমূহ

বিশ্ব নদী দিবসঃ ডাকাতিয়া নদী রক্ষায় প্রধান সমস্যা সমূহ

0
Share

বিশ্ব নদী দিবসঃ ডাকাতিয়া নদী রক্ষায় প্রধান সমস্যা সমূহ

জিল্লুর রহমান:: সমাজ-সভ্যতার সাথে আমাদের জীবন সংসার অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। আমাদের চারপাশের পরিবেশ আমাদের জীবন ধারণের জন্য আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য কিছু উপাদানের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু ওই যে বায়ুর সমুদ্রে থেকে যেমন ভুলে যাই বায়ুর কথা- তেমনি আমরা আমাদের বেঁচে থাকার এই যে সহায়ক পরিবেশ- তার মধ্যে থেকেও ভুলে যাই আমাদের অস্তিত্ব রক্ষাকারী এই পরিবেশকে।

কিন্তু সবাই তো আমাদের মতো নন, কিছু মানুষ আছেন- যাঁরা আত্মবিস্মৃত নন, তাঁরা জানেন বেঁচে থাকার জন্য এই পরিবেশের মূল্য কী। কীভাবে এই পরিবেশ আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে আপন সন্তানের মতোন। কিন্তু মায়ের প্রতি আমরা কেমন আচরণ করি? আমাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমরা যারপর নাই ব্যস্ত। নিজের হাতেই ক্রমাগত ধ্বংস করছি নিজেদের বেঁচে থাকার এই পরিবেশ। কিন্তু আমাদের অস্তিত্ব টিকে রাখতে হলে অবশ্যই আমাদের পরিবেশকে বাঁচাতে হবে। মানবদেহের হৃদপিণ্ড যেমন সারা দেহে রক্ত সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে ঠিক তেমন নদী পরিবেশের সকল উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের জন্য পানি সরবরাহ করে আর পানির অপর নাম জীবন। তাই আমাদের বেঁছে থাকার জন্য নদীর ভূমিকা অপরিসীম।

dakatia

তাই বাংলাদেশের কুমিল্লা, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদী রক্ষা করা আবশ্যক। কিন্তু বর্তমানে ডাকাতিয়া নদী রক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা গুলো হতে নিম্নরুপঃ

অবৈধভাবে নদী দখলঃ

চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অমীমাংসিত মালিকানায় দখলের উত্সব চলছে ডাকাতিয়া নদীর দু’তীরে। একশ্রেণীর ভূমিদস্যু নদীটির দু’তীরে গড়ে তুলছে একের পর এক স্থাপনা। নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন। মরে যাচ্ছে একসময়ের সেই খরস্রোতা ডাকাতিয়া। আইন প্রয়োগ করে ডাকাতিয়ার রক্ষররাই আইন ফাঁকফোকর খুঁজে তথাকথিত ভূমিদস্যুদের সাহায্য করছে। ফলে দিন যত যাচ্ছে, ততই স্থাপনা বাড়ছে ডাকাতিয়ার দু’তীরে। ক্রমেই থেমে যাচ্ছে ডাকাতিয়ার খরস্রোত, তর্জন-গর্জন এবং জোয়ার-ভাটার প্রাবাল্য। মারাত্মক পরিবেশ ও কৃষিবিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালীর লাখ লাখ মানুষ। ২০০৮ সালের নভেম্বরে জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ এবং চাঁদপুর পৌরসভার যৌথ জরিপ অনুযায়ী বড় স্টেশন মোলহেডের কাছে মোহনা থেকে ইচলি পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার নদীর দু’তীরে প্রায় ১৩৬টি স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ৩৪টি স্থায়ী, ৫৮টি অস্থায়ী, পৌরসভা ১৫টি স্থায়ী, ৮টি অস্থায়ী এবং বিআইডব্লিউটিএ ৪টি অস্থায়ী লিজ প্রদান করে। এর বাইরে আরও ১৭টি ব্যক্তি মালিক দাবিদারের স্থাপনা রয়েছে। বর্তমানে নদীটির দু’তীরের দখলদারের সংখ্যা প্রায় ২ শতাধিক।

নদী, ফোরশোর ল্যান্ড, খাস সব জমির মালিক ভূমি মন্ত্রণালয়। ১৯৬০ সালে চাঁদপুরকে বন্দর ঘোষণার পর ডাকাতিয়ার দু’পাড়ের ১৩০ একর সম্পত্তি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিএকে লিজ দেয়া হয় ৩০ বছরের জন্য। ১৯৯০ সালে সেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর আরও ১৩ বছরের জন্য সেই লিজ নবায়ন করা হয়। যার মেয়াদ শেষ হয় ২০০২ সালে। এরপর অদ্যাবধি তাদের লিজ নবায়ন করা হয়নি। তাই বিআইডব্লিউটিএ’র বর্তমানে ডাকাতিয়ার দু’তীরে নিজস্ব কোনো জায়গা নেই।

১৯৬০ সালে সরকার গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে চাঁদপুরকে নৌবন্দর ঘোষণা করে। সে সময় ডাকাতিয়ার দু’তীরের ফোরশোর ল্যান্ড রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিআইডব্লিউটিএকে সংরক্ষক নিযুক্ত করে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আইন অনুযায়ী ভরা বর্ষায় নদীর পানি দু’তীরে যতটুকু ওঠে তার ৫০ গজ দূরত্ব পর্যন্ত ভূমিকে ‘ফোরশোর ল্যান্ড’ বলে। ভূমি মন্ত্রণালয় ২ দফা প্রায় ৪৩ বছরের জন্য ফোরশোর ল্যান্ড বিআইডব্লিউটিএকে লাইসেন্স করে দেয়।

হঠাৎ করে ওই মেয়াদ শেষ হলে ২০০৩ সাল থেকে ওই ভূমির লিজ নবায়নে জেলা প্রশাসন অনীহা প্রকাশ করে। অন্যদিকে বিআইডব্লিউটিএ’র লিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার বহু আগ থেকেই অর্থাৎ ১৯৯০ সাল থেকে জেলা প্রশাসন চাঁদপুর নদীবন্দরের তীর ভূমি বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে স্থায়ী/অস্থায়ী লিজ দেয়া শুরু করে। সেই থেকে লিজ গ্রহীতারা ডাকাতিয়ার দু’পাড় দখলের প্রতিযোগিতায় নামে। তারা নদীভরাট করে পাকা স্থাপনা, বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বহুতল ভবন নির্মাণ করে।

বিআইডব্লিউটিএ’র দাবি, জেলা প্রশাসন সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিক এবং অন্যায়ভাবে বিশেষ সুবিধা নিয়ে নৌবন্দরের জায়গা বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে লিজ দিয়েছে। অথচ মেয়াদ শেষে বিআইডব্লিউটিএকে বন্দরের জায়াগটির লাইসেন্স নবায়ন করে দেয়নি। ১৯৬০ সালে তত্কালীন সরকার গেজেট নোটিফেকেশনের মাধ্যমে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, বরিশাল ও টঙ্গীর সঙ্গে চাঁদপুরকে নৌবন্দর ঘোষণা করে। সে সময় বন্দর সীমানা নির্ধারণসহ বিআইডব্লিউটিএকে কনজারভেটর নিয়োগ করে। ওই গেজেট নোটিফিকেশনে নির্ধারিত সীমানার মধ্যে ফোরশোর ল্যান্ডের ১৩০ একর তীরভূমি বিআইডব্লিউটিএর অনুকূলে হস্তান্তর করে। নানা কারণে ওই পরিমাণ সম্পত্তির বিরাট অংশ এরই মধ্যে বেদখল হয়ে গেছে।

অন্যদিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম, হাজীগঞ্জে অবস্থিত ডাকাতিয়া নদীর বেশীর ভাগ অংশই দখল হয়ে গেছে। কোথায়ও কোথায়ও নদীর উপর অবৈধ বাঁধ তৈরী করা হয়েছে।

ভয়াবহ পরিবেশ দূষণঃ

পরিবেশ দূষণের কারণে গত ২০ বছরে নদীর ৮০ ভাগ মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এছাড়াও গত কয়েক বছর ধরে সুপারীর মৌসুমে এক শ্রেণীর সুপারি ব্যবসায়ী হাজার হাজার কাউন পাকা সুপারি ৪-৫ মাস নদীতে ভিজিয়ে রাখে। আর সুপারির বাকল পঁচে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে শুষ্ক মৌসুম এবং বোরো মৌসুমে ডাকাতিয়া নদী পানি শূন্য হয়ে পড়ে। অপরদিকে পানির ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় বর্ষার সামান্য বৃষ্টিতে ডাকাতিয়া টইটুম্বুর হয়ে পড়ে। নদীর দুইতীর উপচে জনপদে পানি ঢুকে পড়ে। সৃষ্টি হয় অকাল বন্যার। সেচের অভাবে হাজার হাজার একর জমির ফসল শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়।

জীববৈচিত্র হ্রাসঃ

এই নদীতে ইলিশ, চিংড়ি, বোয়াল, গজার, শোল ও অনেক ধরণের মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু নদী ভরাট ও পানি দূষণের কারণে নদীতে আগের মত আর মাছ পাওয়া যায় না। ময়লা আবর্জনা নদীতেই ফেলার কারনে নদীতে জলজ জীব বসবাস করার উপযোগিতা হারিয়ে ফেলসে। নদীর আশেপাশের কৃষি জমিতে প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক ব্যাবহার করার কারনে নদীর পানির অণুজীবগুলো মরে যাচ্ছে। ফলে খাদ্য চক্রে এর প্রভাব পড়ছে ও বাস্তুতন্ত্র বিনষ্ট হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে ডাকাতিয়া নদীর জীববৈচিত্র ধ্বংস হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ, বাঁধ নির্মাণ, নদী দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়া, অধিক মাত্রায় মৎস আহরণ সহ মানব সৃষ্ট বিভিন্ন কারনে ডাকাতিয়া নদীর জীববৈচিত্র আজ হুমকির মুখে।

অর্নিধারিত সীমানাঃ

ডাকাতিয়া নদীর সীমানা অর্নিধারিত ও এই নদীর কোন সুনির্দিষ্ট ম্যাপ নেই। তাই দুষ্টচক্র এর সুযোগ নিয়ে অবাধে নদী দখল করছে ও নদীর আশেপাশে অনেক অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলছে যা নদীর পানি ও পরিবেশ উভয়কেই দূষিত করছে।

এই সমস্যাগুলোর সমাধান হলে পুনরায় ডাকাতিয়া নদী তার হারানো যৌবন ফিরে পাবে বলে আশা রাখি।

লেখক: সম্পাদক দৈনিক সময়ের আলো

 

মতামত | সাক্ষাৎকার আরও সংবাদ

কৃত্রিম ভুলুয়া এখন রামগতি ও সুবর্ণচরের দানব

শতবর্ষী টুমচর ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা

রিপোজটরি সাইট গিটহাবে বাংলাদেশী ডেভেলোপার আরমান হাকিম সাগরের কান্ট্রিবিউশন

নিবন্ধনের জন্য প্রথমদিকে আবেদিত নিউজ পোর্টালগুলোর নিবন্ধন পেতে আর কত বছর?

স্বামীকে গলাকেটে হত্যা | ঘটনার এপিঠ-ওপিঠ

ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে বাংলাদেশেও জেন্ড সার্টিফাইড ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বাড়ছে

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Chief Mentor: Rafiqul Islam Montu, Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu.
Muktijudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794 822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com