সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর বৃহস্পতিবার , ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিলুপ্তির পথে আমাদের মৎস্য সম্পদ: হারাতে বসেছি “মাছে-ভাতে বাঙ্গালী”র ঐতিহ্য

বিলুপ্তির পথে আমাদের মৎস্য সম্পদ: হারাতে বসেছি “মাছে-ভাতে বাঙ্গালী”র ঐতিহ্য

বিলুপ্তির পথে আমাদের মৎস্য সম্পদ: হারাতে বসেছি “মাছে-ভাতে বাঙ্গালী”র ঐতিহ্য

fishনূর মোহাম্মদ: আমাদের দেশে সারা বছর ধরে ক্ষেত-খামারে, খালে-বিলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। জাল পাতলেই জাল ভরে কই,পুটি, চিতল, বাইং, কাইক্কা, লাটি, শইল, মাগুর, শিং সহ নানা প্রজাতির মাচ জাল ভরে উঠত। পাড়ার ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন ক্ষেত- খামারে জাল পেতে রাখত আর সকাল বেলা

বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সহ জাল তুলে আনত। কিন্তু এখন তা যেন স্বপ্ন। বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু মাছ হারিয়ে যাচ্ছে বাঙ্গালীর রসনার তালিকা থেকে। আস্তে আস্তে আমরা ভুলতে চলেছি বিভিন্ন প্রজাতির মাছের নাম। যা খুবই ভাবার বিষয়। আমরা যদি আমাদের দেশের প্রচলিত মাছের প্রজাতি গুলি ধরে রাখতে না পারি তবে আমাদেরকে ধার করে মাছ পুষতে হবে। যার প্রমাণ ইতিমধ্যে আমরা পেতে শুরু করেছি। আমরা এখন ফার্মের মুরগির মত কই মাছ চাষ করি। যা আমাদের জন্য সত্যিই দুঃখের বিষয়।

জেলেরা দিন দিন বেকার হয়ে যাচেছ। তাদের মতে, বর্ষাতে গত বছরও প্রচুর ইলিশ সহ অন্যান্য মাছ ধরা পড়েছে অথচ এই বর্ষাতে তার অর্ধেক ইলিশও পায়নি তারা। তাই তারা চিন্তিত তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। কারণ এমন কোন জেলে নেই যার দাদন নেই। প্রত্যেক জেলেই মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে যায়। তারা দাদনের টাকা নৌকা ও জাল ক্রয় এবং নদীতে থাকা খাওয়ার জন্য ব্যয় করে।

লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলা, রামগতি ও কমলনগরের মাছ ঘাট গুলি অনেকটাই ফাঁকা। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা তাস খেলে, আড্ডা দিয়ে অথবা পুরাতন জাল বুনে সময় কাটাচ্ছে। কথা হয় সাহে বেরে হাট মাছ ঘাটের জেলে ফারুক মাঝির সাথে, জেলে দুলাল, বাহার এরা সবাই ঐ এলাকারাই জেলে । নদী অনেক আগেই তাদের ভিটা ছাড়া করেছে। এখন নদীতেই থাকে, নদীতে খায়, সে খানেই ঘুমায়। তাদের মতে, গত কয়েক বছরে এই রকম অবস্থা হয়নি। সব জেলে মোটামুটি মাছ পেত। কর্জ, দাদন, ধার-দেনা পরিশোধ করতে পারতো।

লক্ষ্মীপুর জেলার অন্যতম মাছ ঘাট- রামগতি বাজার মাছ ঘাট, বিবিরহাট মাছ ঘাট, লুদুয়া মাছ ঘাট, সাহেবের হাট মাছ ঘাট, তালতলি- চৌধুরী বাজার মাছ ঘাট, মতিরহাট মাছ ঘাট, মজুচৌধুরীর হাট মাছ ঘাট ইত্যাদি মাছ ঘাট গুলিতে আগের মত উৎসব নেই। হাক-ডাক নেই জেলেদের । ঘাটে ইলিশ ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। মাছ ঘাট কেন্দ্রিক দোকান পাটে বেচা-কেনা কম। অল্প পরিমাণে যে মাছ ধরা পড়ে তা স্থানীয় বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়, বাকী মাছ চলে যায় শহুরে মানুষে পাতে।

জৈষ্ঠ থেকে শ্রাবণ পর্যন্ত এই তিন মাস ইলিশের ভরা মৌসুম। এই সময় বঙ্গপসাগর সহ মেঘনা ও পদ্মাতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার কথা। কিন্তু এ বছর মৌসুম শুরু হলেও ইলিশ ধরা পড়েনি। জেলেরা জানান নির্বিচারে জাটকা বা ইলিশের পোনা নিধনের কারণে এবং নদ-নদীতে পরিবেশ দুষণ ইলিশ উৎপাদনের অন্তরায়। সাধারণত জানুয়ারী থেকে এপ্রিল পর্যন্ত জাটকা ধরার মৌসুম। মৎস্য বিভাগ এ সময় ইলিশ শিকার বন্ধে নানা উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে এর ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না।

মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, প্রতিবছর জাটকা ধরা পড়ে ২০ হাজার মেট্রিক টনের মত। অভ্যন্তরিন নদীতে ইলিশ কমার আরেকটি কারণ জানা যায়, সমুদ্রে ইলিশ আহরণ বাড়ার কারণে ইলিশ আরো গভীর সমুদ্রের দিকে চলে যাচ্ছে। ইলিশ যদি আরো গভীর সমুদ্রের দিকে চলে যায় তবে, ইলিশ হবে সখিন মানুষের রসনার বস্তু। সাধারন মানুষ ইলিশের স্বাদ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হবে।

মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, সারা বিশ্বে ইলিশের মোট উৎপাদন চার থেকে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে মিয়ানমারে এক থেকে সোয়া লাখ মেট্রিক টন। ভারতে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন এবং আমাদের দেশে আড়াই লাখ মেট্রিক টন। শতকরা হিসাবে আমাদের দেশেই ধরা পড়ে মোট ইলিশের ৫০-৬০ শতাংশ। এ জন্যই ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে বার্ষিক মৎস্য উৎপাদনের ১৩ শতাংশই ইলিশ। টাকার অংকে এর মূল্য ৫ হাজার কোটি টাকা। জিডিপিতে ইলিশের অবদান শতকরা ১ ভাগ। প্রতিবছর ইলিশ রপ্তানি করে আয় হয় ১০০ কোটি টাকার বেশী। গত ২০০৭-০৮ ইং অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন। দেশের ৪০ টি জেলার ১৪৫ টি উপজেলায় প্রায় সাড়ে চার লাখ জেলের জীবিকা ইলিশ নির্ভর। এদের শত করা ৩২ ভাগ সার্বক্ষণিক এবং ৬৮ ভাগ জেলে মৌসুমী ইলিশ ধরে থাকে। এ ছাড়া জাল, নৌকা তৈরী, পরিবহন, বিপণন, সংরক্ষণসহ ইলিশ নিয়ে নানা কাজে কর্মসংস্থান হয়েছে ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ মানুষের।

এই বিশাল কর্মসংস্থান ধরে রাখার একমাত্র উপায় হলো ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি করা, জাটকা সংরক্ষণ করা, ইলিশের অভয়ারণ্য গুলিতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা, ডিম ওয়ালা ইলিশের জন্য যে সমস্ত এলাকায় মা’ মাছ ডিম ছাড়ে ঐ সমস্ত এলাকাকে কোস্ট গার্ডদিয়ে পাহারা জোরদার করা এবং মার্চ থেকে এপ্রিল ও নভেম্বর থেকে জানুয়ারী পর্যন্ত ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ করা।

জেলে সম্প্রদায় এবং ইলিশ ব্যবসার সাথে জড়িত সকল শ্রেণীর মানুষের একটাই দাবী জাতীয় মাছ ইলিশ যেন সাধারণ মানুষের নাগালে থাকে এবং এই পেশার সাথে জড়িতরা যেন কোন ভাবেই বেকার হতে না হয় সে জন্য এখন থেকে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পা প্রণয়ন এবং তার কঠোর বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে আজকের এই হতাশা জনক অবস্থা থেকে উত্তোরণ সম্ভব বলে মনে করে জেলেরা।

পাশাপাশি বিভিন্ন কীটনাশক ঔষধ ব্যবহারের কারণে খাল-বিলে, ক্ষেতে-খামারে এখন আর মাছ পাওয়া যায়না। বর্ষাকালে ধান ক্ষেতে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমন হলে কৃষকরা বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করে। তাই বিভিন্ন কীটপতঙ্গের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।

আরেকটি সমস্যা হলো আগে আমাদের দেশে ট্রাকটর দিয়ে জমি চাষ করা হতো না। গরু আর লঙ্গলই ছিলো চাষীদের হালচাষের একমাত্র মাধ্যম। গরু দিয়ে ক্ষেত চাষ করলে মাছের কোন ক্ষতি হয় না। কিন্তুু ট্রাকটরের লোহার লাঙ্গলের আঘাতেও মাছ মারা যায়। এতে করে মাছ নষ্ট হচেছ। কৃষি কাজে কীটনাশক ব্যবহার ও ট্রাকটরের লাঙ্গলের বদলে বিকল্প পদ্ধতি আবিস্কার করতে হবে। তবেই মৎস্য সম্পদকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। নতুবা আমরা হারিয়ে ফেলব আমাদের সমৃদ্ধ মৎস্য সম্পদ।

লেখকঃ নির্বাহী পরিচালক, ইসোলপ, ই-মেইলঃ nour.laxmi@gmail.com

প্রতিবেদন আরও সংবাদ

এক মেশিনেই ৮০ রোগের চিকিৎসা দেন রায়পুরের আবু তাহের সিদ্দিক !

লক্ষ্মীপুরের নারী ও কিশোরীদের হাতে তৈরি ৫কোটি টাকার টুপি রপ্তানি হয় মুসলিম বিশ্বে

লক্ষ্মীপুর থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত মেঘনা নদীতে ১৬ চর | কমেছে ইলিশ; নদীপাড়ের মন্দার প্রভাব

লক্ষ্মীপুর থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত মেঘনা নদীতে ১৬ চর | চরে আটকে যাচ্ছে জীবন ও অর্থনীতি

লক্ষ্মীপুরে বছরে ১১ কোটি ঘনফুট উর্বর মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

প্রবাসী স্বামী ওপর জেদ করে কোলের শিশুকে রেখে যান ভিক্ষুকের কোলে; জানিয়েছে শিশুর মা

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Ratan Plaza(3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com