সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর শুক্রবার , ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অবেহেলিত বেসরকারী শিক্ষক সমাজ

অবেহেলিত বেসরকারী শিক্ষক সমাজ

2
Share

অবেহেলিত বেসরকারী শিক্ষক সমাজ

মোঃ আজিজুর রহমান আযম:: শিক্ষকতা একটা মহান পেশা। দুনিয়াতে আর এমন একটি পেশা নেই যা সম্মানের দিক থেকে শিক্ষকতা পেশার সমান। শিক্ষকরা সোনার মানুষ গড়ার কারিগর। একটি দেশ জাতি ও সমাজ তার ভবিষ্যত প্রজন্মকে যে বিশ্বাস, মূল্যবোধ, দেশপ্রেম, দক্ষতা ও নৈতিকতা বোধ নিয়ে গড়ে তুলতে চান সেই কাজটা সম্পন্ন করেন সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দরা। শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার ও জাতীয় উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। শিক্ষার গুনগত উন্নয়ন ব্যতিরেকে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রধান মাপকাঠি হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষার অধিকার পরিপূর্ণভাবে অর্জিত হলে জনসাধারণের অন্যান্য অধিকার আদায়ের পথ সুগম হবে। অথচ স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও আমাদের সংবিধানে শিক্ষা মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হয়নি। সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষাকে মৌলিক নীতিমালা হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এগুলো সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনার দিক নির্দেশনা দেয়। শিক্ষা মৌলিক অধিকার না হওয়ার কারণে মৌলিক নীতিমালা লংঘনের দায়ে রাষ্ট্র বা সরকারকে আইনত বাধ্য করা যায় না বা তার বিরুদ্ধে মামলা করা যায় না। মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ অর্থাৎ হেফাজত করার দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের, যা সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে এবং এই মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ১০২(১) বিধান মোতাবেক সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে মামলা করতে পারবে। আইনগত অধিকার না থাকায় বেসরকারী শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য প্রাপ্য পাওয়ার জন্য রাষ্ট্রের করুণার উপর নির্ভর করতে হয়। এটি একেবারেই অনভিপ্রেত।

বেসরকারী শিক্ষকদের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারী উদ্যোগ এবং পর্যাপ্ত সমর্থন না থাকায় তারা সর্বদাই বঞ্চিত হয়। উদাহরণ স্বরূপ দেখা যায় বেসরকারী শিক্ষকদের বাড়ীভাড়া পান ১০০০টাকা। বাড়ী ভাড়াতো দূরের কথা বাড়ীর বারান্দাও পাওয়া সম্ভব নয়। চিকিৎসা ভাতা পান ৫০০ টাকা। তা নিত্যান্তই অপ্রতুল এবং উৎসব ভাতা পান স্ব স্ব স্কেলের ২৫ ভাগ। বেসরকারী স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা কোন শিক্ষা ভাতা, টিফিন ভাতা ও পাহাড়ি ভাতা পান না। বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের পদোন্নতির কোন সুবিধি ব্যবস্থা নেই। যেমন বেসরকারী কলেজে এমন অনেক মেধাবী শিক্ষক/শিক্ষিকা আছেন যাদের এস.এস.সি থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যন্ত অনেক বিষয়ে প্রথম শ্রেণী প্রাপ্ত এবং তাদের অনেকেই আবার এমফিল ও পিএইচ ডি ডিগ্রীর অধিকারী হয়েও পদোন্নতিতে অনুপাত থাকার কারণে সহকারী অধ্যাপক হতে পারেন না। তাদের এত উচ্চ মানের ডিগ্রী থাকার পরও ট্রেজেডিটা হলো তাঁদের অনেক হতভাগ্য শিক্ষক-শিক্ষাকে পুরো চাকুরী জীবনে প্রভাষক হিসাবে জীবন কাটিয়ে দিতে হয়। বেসরকারী কলেজে পদোন্নতির কোন সুব্যবস্থা না থাকায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখন এই সম্মাণিত পেশায় আসতে চরম অনিহা প্রকাশ করেন। পৃথিবীর কোন উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে এমন তুঘলকী প্রথা আছে বলে আমাদের জানা নেই। দেশের মেধাবীদেরকে এই পেশায় আনার জন্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষকদের সম্পূর্ন স্বতন্ত্র বেতন স্কেল দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আসছেন কিন্তু তাঁর এই ঘোষণা ঘোষণা হিসাবেই থাকলো আলোর মুখ দেখলো না। কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রণয়ন করার মাধ্যমে শিক্ষার গুণগত মানে অগ্রগামী ভূমিকা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে । আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে শিক্ষকদের বেতন ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা আমাদের দেশ থেকে কয়েকগুন বেশী। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আর. এম দেবনাথ দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় তাঁর এক নিবন্ধে লিখেন, ভারত বর্ষে একজন হাই স্কুলের শিক্ষক তাঁকে জানালেন নির্দিষ্ট ডিগ্রী নিয়ে হাইস্কুলে একজন শিক্ষক এখন যোগদান করলেই ২০-২৫ হাজার ভারতীয় রূপি পান। যা চাকুরীতে যোগদান করলে বাংলাদেশের একজন সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ও পান না। তাই এই স্বাধীন দেশের একজন শিক্ষক যখন তার জন্য নির্ধারিত সম্মানীর মাধ্যমে পরিবারের ভরন পোষন ব্যবস্থা না পেয়ে হতাশায় আত্মহত্যা করেন। কিংবা এই মহান পেশা ছেড়ে দিয়ে জীবন জীবিকার তাগিদে অন্য কোন অসম্মানের পেশায় জড়িয়ে যান। তখন স্বাধীন জাতি হিসাবে আমাদের লজ্জিত হওয়ার কথা। এই জন্য অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহী করতে তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অবশ্যই সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই দেশে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরী হবে এবং যোগ্য সু-নাগরিক প্রত্যাশা করা যায়।

কোন জাতি যদি শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয় তাহলে সে-জাতি পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না। প্রায় ৩ দশকের যুদ্ধে বিধস্থ ভিয়েতনাম শিক্ষা খাতে জি ডি পির ৬.৬ শতাংশ বিনিয়োগ করে প্রতিযোগিতায় বিশ্বে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সেখানে আমাদের বিনিয়োগ দক্ষিণ এশিয়ার সর্বনি¤œ মাত্র ২.২ শতাংশ, জিডিপির অন্তত ৬ শতাংশ ও জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ করলে আমরা সার্কভূক্ত দেশের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবো। ইউনেস্কোর হিসাব অনুসারে শিক্ষাখাতের ব্যয় ৬.৬% হওয়া উচিত। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শিক্ষাখাতে বাজেটের ২১ শতাংশ বরাদ্দ থাকত, এখন তা কমিয়ে ১১ শতাংশে নামানো হয়েছে । তিনি বলেন সারাবিশ্বে যখন শিক্ষা বাজেট বাড়ছে আমাদের তখন ক্রমেই কমতে শুরকরেছে। অথচ দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য শিক্ষাকেই সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ছিল। কারণ শিক্ষা একমাত্র দেশকে পশ্চাৎপদতা থেকে মুক্ত করতে পারে। শিক্ষামন্ত্রী নিজেই প্রায়ই বলেন আমরা শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন দিতে পারিনা। তাহলে প্রশ্ন আশায় স্বাভাবিক যে কিভাবে শিক্ষার গুণগত মান তৈরী হবে? ভারত ও নেপালে শিক্ষা খাতে মোট দেশজ সম্পদের ৪%  এর বেশি, ভুটানে ৫%, মালয়েশিয়ায় ৮%, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১০%, সিঙ্গাপুরে ১২%, ব্রাজিল এবং চিলিতে ৪% এর মত। শিক্ষা খাতে ব্যয় সঠিক ভাবে ব্যয়িত হলে তা দেশের উৎপাদনশীল কর্মকান্ডকে গতিশীল করে এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় দক্ষ মানব সম্পদের কেবল যোগান দেয় না বরং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সঠিক মাত্রার মানব সম্পদ তৈরীতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানে উল্লেখ্য যে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা,ডটার অব পিস জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, দক্ষ ও সফল শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বর্তমান সরকার সমাজের সকল স্তর ও চিন্তার মানুষের মতামত গ্রহণ করে জাতির প্রকৃত দৃষ্টিভঙ্গি, আকাংখা ও লক্ষ্যের প্রতিফলন ঘটিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ সালে প্রনয়ন করেছেন। কিন্তু একই সরকার কেন তা দ্রুত বাস্তবায়ন পদক্ষেপ নিতে পারছে না। তা অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে এটি বাস্তবায়ন করতে হলে শিক্ষাখাতে অধিকতর বাজেট বরাদ্দ দেয়া আবশ্যক হয়ে পড়েছে। আমরা আশা করি বর্তমান সরকারের ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ও ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রের পর্যায়ে উন্নীত করতে হলে শিক্ষক সমাজের ন্যায্য পাওনা যেমন সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের মতো বর্তমান স্কেলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পূর্নাঙ্গ বাড়ি ভাড়া, পূর্নাঙ্গ চিকিৎসা ভাতা, উৎস ভাতা,,বৈশাখী ভাতা, টিফিন ভাতা, পাহাড়ি ভাতা, শিক্ষা ভাতা, পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার ব্যাবস্থা অবশ্যই সুনিশ্চিত করতে হবে। সর্বশেষে শিক্ষাবান্ধব সরকারের নিকট বেসরকারী এম পিও ভুক্ত পাঁচ লাখ শিক্ষকের অত্যান্ত ন্যয় সঙ্গত ও যৌক্তিক দাবি গুলো পূরণ করবেন বলে মাননীয় শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষার্থী ও অভিবাবক সহ সমাজের অন্যান্য শ্রেণি/ পেশার মানুষ দৃঢ় ভাবে আশাবাদী ।

লেখক:: সাংবাদিক ও কলামিষ্ট

লক্ষ্মীপুর নিউজ আরও সংবাদ

রামগতিতে দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত

সাংবাদিক জিয়া চৌধুরীর বাবা মাহাবুবের রহমান আর বেঁচে নেই

রামগতিতে আদালতের স্থিতাবস্থা মানছেন না অবৈধ ইটভাটার মালিকপক্ষ

গরমের শুরুতে রামগতিতে ভয়াবহ লোডশেডিং, ভোগান্তিতে উপকূলের গ্রাহক

রামগতিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৮ পরিবারের বসতঘর পুড়ে ছাই

কমলনগরে চার্টার্ড লাইফের মৃত্যু বীমা দাবি চেক হস্তান্তর

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Ratan Plaza(3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com