জুনায়েদ আহম্মেদ: লক্ষ্মীপুরে চলতি মৌসুমে সয়াবিন চাষে ভাটা পড়েছে। এবার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। বৈরী আবহাওয়া ও নানা জটিলতার কারণে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যা ফাল্গুনের শেষে এসেও গত মৌসুমের চেয়ে ১০ হাজার ৩১৫ হেক্টর কম জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার উপর খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে উৎপাদিত সয়াবিনের মধ্যে লক্ষ্মীপুরে উৎপাদন হয় প্রায় ৮০ ভাগ। গত তিন বছর আগে এ জেলায় ৩৯ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষাবাদ করা হলেও চলতি বছর এ জেলায় ৫০ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ নাডার কারণে মাটিতে আদ্রতা বেশী থাকায় মধ্য জানুয়ারী থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সয়াবিন বপন করা হয়। আর ডিসেম্বরের ৯, ১০ ও ১১ এ তিনদিনের অতিমাত্রায় বৃষ্টির কারণে চলতি রবি মৌসুমেও কৃষকরা সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা এখনো পূরণ করতে পারেননি। জেলার পাঁচটি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫০ হাজার ৫০৫ হেক্টর আবাদের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪০ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭ হাজার ৯৫০ হেক্টরের বিপরীতে ৫ হাজার ৬৭০ হেক্টর, রায়পুর উপজেলায় ৭ হাজার ৯৬০ হেক্টরের বিপরীতে ৫ হাজার ৫৪০ হেক্টর, রামগঞ্জ উপজেলায় ৮৫ হেক্টরের বিপরীতে ৮০ হেক্টর, রামগতি উপজেলায় ১৮ হাজার ২০০ হেক্টরের বিপরীতে ১৫ হাজার ৭০০ হেক্টর এবং কমলনগর উপজেলায় ১৬ হাজার ৩১০ হেক্টরের বিপরীতে ১৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদ করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১০ হাজার ৩১৫ হেক্টর কম জমিতে আবাদ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতি একর সয়াবিন উৎপাদনে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। যার বিক্রয় মূল্য ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। অল্প পুঁজিতে কম সময়ে অধিক টাকার ফলন পাওয়ায় সয়াবিনকে সোনার ফসল হিসেবে চিনেন সয়াবিন চাষীরা। গত মৌসুমে সোনার ফসল সয়াবিনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রকৃতি। আবার চলতি মৌসুমের শুরুতেও অতিবৃষ্টিতে সয়াবিন আবাদে চাষীদের বেগ পেতে হয়েছে। মাঘ মাসের শেষে এ জেলায় ২৫ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফাল্গুনের শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে। তবে তা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। চলতি রবি মৌসুমে আবাদী জমিগুলোতে আগাছা পরিষ্কারের কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার সয়াবিন চাষীরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের তুলনায় এবার সোনার ফসল সয়াবিনের বাম্পার ফলন হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন এ জেলার কৃষকরা।
সদর উপজেলার চরমনসা গ্রামের সয়াবিন চাষী আব্দুর রহিম মিয়া। তিনি জানান, গত মৌসুমে ৪০ শতক জমিতে সয়াবিন চাষ করেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সয়াবিন উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি না হলে বেশ লাভবান হতেন। মৌসুমের শুরুতে আবাদ করতে না পারলেও মৌসুমের মাঝামাঝিতে তিনি ৬০ শতক জমিতে সয়াবিনের আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার ভালো ফসল হবে বলে তিনি আশাবাদী।
রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল গ্রামের সয়াবিন চাষী হামিদ মিয়া জানান, আবহাওয়ার কারণে এবার সয়াবিন চাষ দেরিতে শুরু করতে হয়েছে। এবার তিনি ৮০ শতক জমিতে সয়াবিন চাষ করেন। ভালো ফলনের আশায় তাই পরিবারের লোকজন নিয়ে এখন জমিতে সার, কীটনাশক ও পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন গ্রামের সয়াবিন চাষী নিজাম উদ্দিন। তিনি জানান, ২৫ গন্ডা জমিতে তিনি সয়াবিন চাষ করেছেন। পৌষ মাসে সয়াবিন লাগানোর কথা থাকলেও জমিতে পানি থাকায় মাঘের ২০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর সয়াবিনের বীজ বপন করেছি। জৈষ্ঠ্য মাসের শুরুতে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবুল হোসেন জানান, এ বছর সয়াবিন আবাদ শুরু করতে দেরি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার উপর এর প্রভাব পড়েছে। তবে সয়াবিনের কাঙ্খিত ফলনের জন্য কৃষকদেরকে মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কাঙ্খিত সয়াবিন উৎপাদন হবে বলেও তিনি আশাবাদী।
0Share