নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই লক্ষ্মীপুরের রায়পুর সংসদীয় আসনের রাজনীতিতে দিন দিন নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। বিশেষ করে আওয়ামীলীগের রাজনীতিকে ঘিরে। লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুরে সরকার দলীয় নেতা কর্মীরা এখন প্রকাশ্য দ্বিধা বিভক্ত।জানা যায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমপি প্রার্থীরা তৃনমূলের নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন, তাদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে তৎপর রয়েছেন। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি হারুনুর রশীদ, কুয়েত আওয়ামীলীগ নেতা ও বঙ্গবন্ধু স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শহীদ ইসলাম পাপুল, স্বাচীপ নেতা এহসানুল কবীর জগলুল আওয়ামীলীগের টিকেট পেতে সব ধরনের চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন।
বেশ কয়েক জন নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, তৃনমুলের বঞ্চিত কর্মীরা শহীদ ইসলাম পাপুলকে রায়পুরের আওয়ামী রাজনীতির জন্য আশীর্বাদ হিসেবেই মনে করছেন। যদিও জনাব পাপুলকে ঘিরে রায়পুরের রাজনীতিতে স্পষ্ট গ্রুপিং পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই ব্যাপারে শহীদ ইসলাম পাপুল বলেন ” জন নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতকে শক্তিশালী করতেই লক্ষ্মীপুর (২) আসন আমি নেত্রীকে উপহার দিতে চাই, আমি নৌকার বিজয় চাই , আমাদের প্রচেষ্টা এবং শপথ থাকবে যিনিই নৌকার টিকিট পাবেন তাকে সবাই মিলে বিজয়ী করা।”
আওয়ামীলীগের আরেক প্রার্থী জনাব হারুনুর রশীদের ব্যক্তি ইমেজ নৌকা প্রতীকের জয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারে,আর নৌকার টিকেট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতাই অন্যতম কারন হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
স্বাচীপ নেতা এহসানুল কবীর জগলুল একজন স্বজ্জন ব্যক্তি হিসেবেই এলাকায় পরিচিত। আওয়ামীলীগের নির্বাচনী মনোয়ন দৌড়ে তিনিও পিছিয়ে নেই। অন্যদিকে এই আসনে বিএনপির ব্যাপক জনসমর্থন থাকা সত্বেও স্থানীয় দূর্বল নের্তৃত্বের কারনে দল এগুতে পারছেনা। বিএনপি থেকে সাবেক এমপি ও লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল খায়ের ভুইয়ার নামই আলোচিত হচ্ছে বেশী, বিএনপির আরেক নেতা কুয়েত বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মনজুরুল আলমের কথা শুনা গেলেও তিনি এমপি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে থাকবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন আমি স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকবো, জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহনের কোন চিন্তা ভাবনাই আমার নেই। সাথে এখানকার বেশীর ভাগ বিএনপি কর্মী সাবেক এমপি আবুল খায়ের ভূইয়ার অনুসারী ।
বিএনপির আরেক প্রার্থী খালেদা জিয়ার সাবেক প্রধান নিরাপত্তা সমন্বয়ক কর্নেল মজিদ(অবঃ) বিএনপির টিকেট পেতে চেষ্টা করছেন বলে জানা যায়। পদবঞ্চিত, দলের বাইরে থাকা কিছু নেতা-কর্মী কর্নেল মজিদের পক্ষে প্রচারনা চালাচ্ছেন। তবে এই আসনে খায়ের ভুইয়ার মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত মনে করছেন স্থানীয় নেতা কর্মীরা। জাতীয় পার্টির এখানে রাজনৈতিক কর্মকান্ড সীমিত আকারে পরিলক্ষিত হচ্ছে, রায়পুরে জাতীয় পার্টির তেমন জনভিত্তি নেই, বর্তমান জোট এমপি নোমান আবারো জাতীয় পার্টি থেকে নমিনেশন পাবেন বলে জানা যায়। জামায়াতে ইসলামীর এই আসনে অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ নির্বাচনে না গেলে তাঁদের প্রার্থী হিসেবে দলের জেলা আমীর মুক্তিযোদ্ধা মাষ্টার রুহুল আমিনের নামই আলোচিত হচ্ছে বেশী। জামাত এখানে প্রকাশ্য রাজনীতি করতে না পারলেও গোপনে তাঁদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। লক্ষ্মীপুর (২) আসনে জামাতের প্রার্থী বিজয়ী হয়ে আসবেন বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দলটির স্থানীয় নেতারা। সব মিলিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর(২) রায়পুর আসনে বিএনপি, আওয়ামীলীগ, জামাত জমজমাট ত্রীমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় ভোটাররাও একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করছে, যেখানে তারা নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেবে।
গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ‘২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের টার্গেট নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের নভেম্বরের প্রথমে তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের শেষভাগে নির্বাচন হতে পারে বলে মনে করছে ইসি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী দশম সংসদের মেয়াদ শেষের ৯০ দিন আগে নির্বাচন করতে হবে।
নির্বাচিত সংসদের মেয়াদ হয় সংসদ সদস্যরা শপথ নেয়ার দিন থেকে পরবর্তী ৫ বছর। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি সরকার গঠন করা হয়। সেই হিসাবে বর্তমান সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারি। সেক্ষেত্রে ২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারির পূর্বের ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা আছে। সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে।
0Share