নিজস্ব প্রতিনিধি: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯, বিডিআর পিলখানায় শহীদের স্বরণ ও মর্যাদা রক্ষায় ২৫ ফেব্রুয়ারিকে “জাতীয় শহীদ সেনা দিবস” হিসেবে রাষ্টীয় স্বীকৃতি দেয়ার দাবী জানান শহীদ পরিবারের স্বজনরা। ২০০৯ সালের এ দিনে বাংলাদেশ রাইফেলস বা বিডিআরের জওয়ানদের সশস্ত্র বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করে। নৃশংস এই ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো বাংলাদেশ।
পিলখানায় এ বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে যায়। বিডিআরের নাম, পোষাক, লগো, সাংগঠনিক কাঠামো, পদোন্নতি ইত্যাদি ব্যাপারে পুনর্গঠন করা হয়। নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরিবর্তন করা হয় বিডিআর বিদ্রোহের আইন। বর্ডার গার্ড আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা রাখা হয় মৃত্যুদণ্ড।
বিদ্রোহের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় বিশেষ আদালত ১৫২ জনকে ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ হন বিডিআর সদস্য তৎকালীন কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম। তিনি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর লক্ষ্মী গ্রামের লুৎফর করিমের ছেলে। তিনি ১৯৭০ সালে বিডিআরে যোগ দেন।তিনি বিদ্রোহের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। পিলখানায় সবাই যখন নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছেন, মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তিনি তখন বিপথগামী সশস্ত্র জওয়ানদের প্রতিরোধ করতে এগিয়ে যান। পরে বিদ্রোহীরা তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে গণকবরে নিক্ষেপ করে। এর স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার তাঁকে শহীদ ষোঘণা করেছে।
সুবেদার মেজর শহীদ নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, ‘যে রায় ঘোষণা হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। এই রায় দ্রুত কার্যকর করার জন্যে আমরা দাবি জানাচ্ছি। এই রায় দ্রুত কার্যকর করা হলে আমার বাবাসহ পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে।’
অন্যদিকে তিনি আক্ষেপ করে জানান, নৃশংসভাবে হত্যার ৯ বছর কেটে গেলেও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত স্থায়ী পুনর্বাসন সুবিধার আওতায় প্লট পায়নি নুরুল ইসলামের পরিবার। একমাত্র তার পরিবারই এসুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, একমাত্র আমরাই এখনও প্লটটি পাইনি। কবে শেষ হবে এ চিঠি চালাচালি তাও জানি না।
তিনি আরও বলেন, শহীদ পরিবার হিসেবে আমরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আর্থিক সুবিধা ও বিজিবির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা পেয়েছি। কিন্তু ৯ বছর হয়ে গেলেও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত স্থায়ী পুনর্বাসন সুবিধার আওতায় প্লট এখনও পাইনি। প্রতিশ্রুতির পরও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো প্লট বরাদ্দে গড়িমসি কেন করছে বুঝতে পারছি না।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, শহীদ নুরুল ইসলাম ছিলেন অত্যন্ত সৎ এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা। কর্মজীবনে তিনি চারবার ডিজি পদক পান। পরিবার আরও জানায়, প্লট প্রদানে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০১৩ সাল থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখালেখি হলেও বিষয়টি সমাধান হয়নি। গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিজিবির মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি জানালে তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিজিবির ডিজি যুগান্তরকে বলেন, প্লট বরাদ্দের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একটু সময় লাগলেও আমি আশাবাদী, নুরুল ইসলামের পরিবার প্লট সুবিধা পাবে। জানা গেছে, সরকার গঠিত বিডিআর বিদ্রোহের তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিজিবিতে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু ডিওএইচএস হতে বিজিবির জন্য প্লট দেয়ার মতো সুযোগ না থাকায় বিজিবির পক্ষ থেকে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুনরায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়। পরে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় রাজউক চেয়ারম্যানকে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বললেও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় রাজউক বিষয়টির কোনো সমাধান করেনি।
0Share