বিশ্ব ফুটবলে চির প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ হচ্ছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। বাংলাদেশেও এই দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে আছে তীব্র প্রতিযোগিতা। এবার সেই প্রতিযোগিতা দেখা গেছে সয়াবিন তেল আমদানিতে। বাংলাদেশে বছরে যে পরিমাণ সয়াবিন তেল আমদানি হয় তার ৫১ শতাংশ আসে আর্জেন্টিনা থেকে আর ২৪ শতাংশ আসে ব্রাজিল থেকে।
অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশে সয়াবিন তেল আমদানির প্রধান দেশ হচ্ছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। আগে দুই দেশের ব্যবধান কম থাকলেও ব্রাজিলকে পেছনে ফেলে অনেক দূর এগিয়েছে আর্জেন্টিনা। সদ্য সমাপ্ত রমজান উপলক্ষে চার মাসের ভোজ্য তেল আমদানির চিত্র থেকে ব্যবধানের বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে।
‘মুসকান’ ব্র্যান্ড সয়াবিন তেলের বিপণনকারী এস এ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহাবউদ্দিন আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘উৎপাদনে শীর্ষে থাকলেও আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন তেল আমদানি করতে পারি না, পরিবহন খরচ বেশি হওয়ার কারণে। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল দুই দেশ থেকেই আমরা সয়াবিন তেল আমদানি করছি।’
ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে মূলত দুজন সরবরাহকারী আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থেকে সয়াবিন তেল সরবরাহ দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে ‘নিদারা’ কম্পানি মোট তেলের ৮০ শতাংশ আর ২০ শতাংশ সরবরাহ দেয় ‘নোবেল’ নামের আরেক কম্পানি। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সেই সরবরাহকারীর মাধ্যমেই সয়াবিন তেল বুকিং দেন। ব্রাজিল থেকে জাহাজে কিছু তেল ভর্তি হয়ে আর্জেন্টিনা থেকে আরো কিছু তেল ভর্তির পর জাহাজটি বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয়।
জানতে চাইলে নুরজাহান গ্রুপের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, সয়াবিন তেল চাহিদা মেটাতে আমাদের কাছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলই পছন্দ। সয়াবিন তেলের বাজারে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল বিশেষ কোনো পছন্দ নেই। যখন যেখানে দাম ভালো থাকে তখন সেই দেশ থেকেই আমরা আমদানি করি।
জানা গেছে, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২৩ লাখ টন ভোজ্য তেল আমদানি হয়। এর মধ্যে ৫৮ থেকে ৬২ শতাংশই হচ্ছে পাম তেল, যা আমদানি হয়ে থাকে প্রধানত মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। আর ৩৬-৩৮ শতাংশ সয়াবিন তেল, বাকিটা সরিষার তেল।
সাত লাখ টনের বেশি সয়াবিন তেল আমদানি হয়, দেশে উৎপাদন হয় না বলে এর পুরোটাই আমদানি করে মেটানো হয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত দেশে সয়াবিন আমদানি ক্রমাগতভাবেই বেড়ে সাড়ে ৮ লাখ টনে উন্নীত হয়, কিন্তু ২০১৭ সালে সেটি কমে যায় এবং চলতি ২০১৮ সালে আমদানি আরো কমে যায়।
কাস্টমসের হিসাবে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল চার মাসে মোট সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে দুই লাখ ৯৬ হাজার টন। এর মধ্যে এক লাখ ৫২ হাজার টন অর্থাৎ ৫১ শতাংশ আর্জেন্টিনা থেকে আর সাড়ে ৭২ হাজার টন অর্থাৎ ২৪ শতাংশ ব্রাজিল থেকে আমদানি হয়। ৬৫ হাজার টন অর্থাৎ ২২ শতাংশ আমদানি হয় প্যারাগুয়ে থেকে।
ভোগ্য পণ্যের বাজারভিত্তিক ওয়েবপেইজ ইনডেক্স মান্ডির হিসাবে বিশ্বের সয়াবিন আমদানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ আট লাখ টন সয়াবিন তেল আমদানি করেছে। আর আমদানিকারক দেশ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে ভারত, দেশটি ২০১৭ সালে সাড়ে ৩৫ লাখ টন সয়াবিন তেল আমদানি করেছে।
মার্কিন কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ২০১৭ সালে বিশ্বের ১০টি শীর্ষ সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে চীন, যেখানে ২০১৭ সালে এক কোটি ৭০ লাখ টন সয়াবিন তেল উৎপাদন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাদের উৎপাদন এক কোটি দুই লাখ টন। তৃতীয় স্থানে রয়েছে আর্জেন্টিনা, যাদের উৎপাদন ৮৬ লাখ টন। চতুর্থ স্থানে রয়েছে ব্রাজিল ৮০ লাখ টন। এরপর তালিকায় রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ।
0Share