লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরে মাটি কাটার শ্রমিক নূরুল আমিনকে (৫২) গ্রাম্য সালিশে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত ও নাকে খত দিতে বাধ্য করার ঘটনায় চন্দ্রগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুপুরে তাদেরকে লক্ষ্মীপুর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে বুধবার (২১ জুন) রাতে দত্তপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পুলিশ পরিদর্শক) শিপন বড়ুয়া বাদি হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আহসানুল কবির রিপনকে প্রধান আসামি ৭জনের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়। পরে রাতেই বড় আউলিয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে গ্রামপুলিশ জাহাঙ্গীর আলম, সালিশদার জাহাঙ্গীর আলম, কাজী ইউসুফ ও কাজী আলমগীর হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলার ৫ আসামির নাম জানা গেলেও তদন্ত স্বার্থে অপর ২ আসামির নাম জানায়নি পুলিশ। এদিকে মামলার পর থেকে ইউপি চেয়ারম্যান আহসানুল কবির রিপন পলাতক রয়েছেন।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকতার হোসেন বলেন, মাটি কাটার শ্রমিকেক বেত্রাঘাত ও নাকে খত দেয়ার ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি চেয়ারম্যান রিপনসহ বাকিদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে বুধবার (২১ জুন) দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি মো. তাছেব হোসাইনের করা জনস্বার্থে রিট মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর দ্বৈত অবকাশকালীন বেঞ্চ এ রুল দেয়। চন্দ্রগঞ্জ থানার ওসি ও ইউপি চেয়ারম্যানকে সুপ্রিম কোর্টে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রিটকারী আইনজীবি মোঃ তাছেব হোসাইন জানান, আদালত নির্যাতিত পরিবারটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপারকে (এসপি) নির্দেশ দিয়েছেন। এসময় চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহসানুল করিব রিপনকে ৩ জুলাই সকাল সাড়ে ১১ এগারটায় সুপ্রিম কোর্টে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়। এ ঘটনার সাথে জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এসপিকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। যুগান্তরসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে ছবিসহ এক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। জনস্বার্থে আদালতের নজরে এনে আইনজীবি মো. তাছেব হোসাইনের রিট মামলা (৯১৮০/২০১৭) দায়ের করেন। আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেয়। প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আহসানুল কবির রিপন ২য় রমজান গ্রাম্য সালিসে শ্রমিক নূরুল আমিনকে বাড়ি থেকে ধরে এনে প্রকাশ্যে নাকে খত দিতে বাধ্য করেন। এসময় তার (চেয়ারম্যান) নির্দেশে গ্রামপুলিশ জাহাঙ্গীর আলম ওই শ্রমিককে ১০ থেকে ১১টি বেত্রাঘাত করে। অভিযোগকারী শহীদ ও তার স্ত্রীর পায়ে ধরে দু’দফায় ক্ষমা চেয়েও রক্ষা পাননি তিনি। ঘটনার পর থেকে নির্যাতিত নূরুল আমিনের পরিবারটি লোকলজ্জায় মানষিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। পরিবারের সদস্যরা ঘর থেকে তেমন বের হন না। চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীদের ভয়ে আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়েছে তারা।
আরো পড়ুন:
লক্ষ্মীপুরের এক ওসি ও ইউপি চেয়ারম্যানকে সুপ্রিম কোর্টে তলব
লক্ষ্মীপুরের চেয়ারম্যানের এ কেমন বিচার !
0Share