নিজস্ব প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে পাওনা টাকা আদায়ে আইনি নোটিশ করায় এক কাঁচামাল ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় পুলিশ ব্যবসায়ী আবু তাহেরকে (৪২) গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয় লোকজন। প্রতিবাদে তারা করুনানগর বাজারে বিক্ষোভ মিছিলও করেছে।
বুধবার বিকেল ৪টার দিকে ঘটনাস্থল চরজাঙ্গালিয়া গ্রাম ও করুনানগর বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ী, স্থানীয় লোকজনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলা হয়। এ সময় মামলাটি সম্পূর্ণ সাজানো বলে তারা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে ২০ মে উপজেলার চরজাঙ্গালিয়া গ্রামের অঞ্জন চন্দ্র দাস আবু তাহেরের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা ধার নেয়।
এ সময় তিন মাসের মধ্যে ওই টাকা পরিশোধ করার কথা বলে নিজের সোনালী ব্যাংক কমলনগর শাখার (হিসাব নম্বর-১০০০১৩১৫৯) একটি চেক দেয়া হয়। পূর্বনির্ধারিত ২২ আগস্ট তাহের চেক নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে দেখেন, ওই হিসাবে টাকা নেই। ব্যাংক থেকে চেকটি ফেরত দেয়া হয়।
পরে ২৭ আগস্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চেকটি ডিজওনার করেন। পরদিন তাহেরের পক্ষে লক্ষ্মীপুর জজকোর্টের আইনজীবী আব্দুল ওদুদ অঞ্জন চন্দ্র দাসকে আইনি নোটিশ পাঠায়। এ সময় ৩০ দিনের মধ্যে পাওনা পরিশোধ করার জন্য বলা হয়। না হয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন অঞ্জন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে অঞ্জন চন্দ্র দাসের স্ত্রী (৩৫) বাড়ির পাশে পুকুর ঘাটে যায়। সেখানে পূর্ব থেকে ওঁৎপেতে থাকা আবু তাহেরসহ অজ্ঞাত তিন-চারজন তার মুখ চেপে ধরে। পরে তাহের জোরপূর্বক তার মুখ বেঁধে ফেলে।
এ সময় অন্যদের সহযোগিতায় একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়। পরে খোঁজাখুঁজি করে ঘটনাস্থল থেকে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় ১৯ সেপ্টেম্বর অঞ্জনের ভাই সুদীপ চন্দ্র দাস বাদী হয়ে কমলনগর থানায় মামলা করেন। এতে আবু তাহেরের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত তিন-চারজনকে আসামি করা হয়।
তাহের প্রতিদিন বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত করুনানগর বাজারের মো. মনিরের মুদি দোকানের সামনে কাঁচামাল বিক্রি করেন। রোববার সাপ্তাহিক বাজার সেখানে। ওইদিন বিকেল থেকে রাত ১১টায় পর্যন্ত তিনি কেনাবেচা করেছেন। অথচ মামলায় বলা হয়েছে, ওইদিন সন্ধ্যায় চরজাঙ্গালিয়া গ্রামে তিনি ধর্ষণ করেছেন।
মাকছুদ স্টোরের মালিক মাকছুদুর রহমান বলেন, রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ৭টার দিকে তাহের আমার দোকানে বসে চা খেয়েছেন। এ সময় তিনি বসে লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। পাওনা টাকা চাওয়ায় ধর্ষণের মামলা দেয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে চরজাঙ্গালিয়া গ্রাম ও করুনানগর বাজারের গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাহের পাওনা টাকা আদায়ের জন্য অঞ্জনকে চাপ দিয়ে আসছে। স্থানীয়দের দিয়ে টাকা উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়েও তিনি ব্যর্থ হন। এজন্য সম্প্রতি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।
এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ধর্ষণ নাটক সাজানো হয়। আর ঘটনার সময় তাহের বাজারেই ছিলেন। শত শত লোক তাকে বাজারে দেখেছেন। বাজার থেকে ঘটনাস্থলে যেতে এক-দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে। পরিকল্পিতভাবে তাবে মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তাহেরকে গ্রেফতার ও হয়রানির প্রতিবাদে স্থানীয় লোকজন বুধবার করুনানগর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
পুলিশ হেফাজতে আবু তাহের সাংবাদিকদের বলেন, পাওনা টাকা চাওয়াই আমাকে মিথ্যা মামলায় জেলে আসতে হয়েছে। আমাকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করার পর থানায় নিয়ে পুলিশ বেধড়ক পিটিয়েছে। এখন হাত-পাসহ পুরো শরীরের ফোলা-জখম রয়েছে। আমি মামলাটির নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
মামলার বাদী সুদেব চন্দ্র দাস বলেন, আমার ভাইয়ের সঙ্গে তাহেরের লেনদেনের ঘটনা সত্য। মিনতি রানী ধষর্ণের কথা বলায় আমি বাদী হয়ে মামলা করেছি। সন্ধ্যা ৭টায় তাহের করুনানগর মাহফুজ স্টোরে বসে চা খেয়েছেন জানালে তিনি বলেন, আমি তা জানি না। তবে করুনানগর থেকে ঘটনাস্থলে যেতে এক ঘণ্টা সময় লাগে বলেও তিনি জানান।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনাটিকে এখন ধর্ষণ বলা যাবে না। তবে প্রাথমিকভাবে যৌনাঙ্গে আঘাতের আলামত পাওয়া গেছে। তবে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে, প্রতিবেদন হাতে পেলেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কমলনগর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মহিন উদ্দিন বলেন, এ মামলার প্রধান আসামি তাহেরকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। পুলিশ হেফাজতে আসামিকে পেটানোর অভিযোগ সঠিক নয়। মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে না বলেও জানান তিনি।
0Share