সানা উল্লাহ সানু: আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে লক্ষ্মীপুরে ব্যস্ততা বেড়ে গেছে কামারদের। জেলার প্রায় প্রতিটি ছোট বড় বাাজারে দেখা যাাচ্ছে কামারশালায় কেউ হাতুড়ি দিয়ে লোহা পেটাচ্ছে, কেউ হপার টানছে, কেউ তৈরি করা সামগ্রীতে
শান (ধার) দিচ্ছে। নতুন বটি, চাকু, চাপাতি যেমন বিক্রি হচ্ছে তেমনি পুরনোগুলোর শান দিতে আসছেন অনেকেই। ঈদুল আজহায় কোরবানি পশুর চামড়া ছড়ানো থেকে শুরু করে মাংস কাটার কাজে ব্যবহার করা হয় কামারশালার বিভিন্ন সমগ্রী। কোরবানিকে সামনে রেখে পশু জবাইয়ের জন্য বড় ছুরি, গৃহস্থালী কাজের জন্য বটি, মাংস কাটার জন্য চাপাতি ও চামড়া ছড়ানোর জন্য কামানা ছুরির বা ছোট ছুরির চাহিদা বেশি । তবে এ বছর চীনের তৈরি বিভিন্ন যন্ত্রপাতিও পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান, বেশ কয়েক জন।
প্রতিটি বড় ছুরি ২শ টাকা, বটি ৩শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা, চাপাতি ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে জেলা শহরসহ উপজেলা সদর, কমলনগর, রায়পুর, রামগঞ্জ ও রামগতির হাটবাজার গুলোতে।
জেলা শহরের এক দোকানি বলেন, কোরবানির ঈদে ছুরি আর চাপাতি বেশি চলে। হুজুররা গরু জবাইয়ের জন্য ১৮ ইঞ্চি ছুরি ব্যবহার করেন। এ সময় এটাও বেশ ভাল চলে। মজুরিসহ এর দাম ১শ থেকে ২শ টাকা পড়ে বলেও জানান তিনি।
বাজারে চাপাতি কিনতে আসা এক মাদ্রাসাছাত্র নিজাম জানান, এবার প্রতিটি জিনিসের দাম খুব বেশি। গত কোরবানির ঈদে চাপাতি আর ছুরি যে দামে কিনেছি এবার প্রায় ৫০ থেকে ১শ টাকা বেশি দাম পড়ছে।
কামাররা জানায়, প্রতিদিন এসব সামগ্রী বিক্রি করে লাভ থাকছে সামান্য টাকা। বাকি টাকা সামগ্রী তৈরির কাঁচামাল, কয়লা কিনতে ও মজুরি খরচে চলে যায়।
বর্তমানে লোহার দাম বেশী। এছাড়া ১ মণ কয়লার দাম ৮শ টাকা। এভাবে যদি কয়লা ও লোহার দাম বাড়তে থাকে তবে এই পেশা টিকিয়ে রাখা অনেক কঠিন হবে বলেও মনে করছেন অনেক কামার ।
স্থানীয় বাজার থেকে লোহা কিনে সেগুলো পুড়ে দা, বঁটি, চাপাতি, চাকুসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করছেন কামাররা। চন্দ্রগঞ্জের কামার শিল্পী শচীন কর্মকার ও নেপাল কর্মকার জানান, এক সময় কামারদের যে কদর ছিল বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে ফলে আমাদের তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ আকর্ষণ হারাচ্ছে। হয় তোবা এক সময় এই পেশা আর থাকবে না।
তবে কোরবানির ঈদের সময় আমরা একটু আশাবাদী হই।
কামার শিল্পী লক্ষণ বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষরা এ কাজ করে আসছেন, সারা বছর তেমন কোন কাজ না থাকলেও কোরবানির সময় আমাদের কাজের চাহিদা বেড়ে যায়।এ পেশায় আমরা যারা আছি তারা খুবই অবহেলিত।
0Share