নিজস্ব প্রতিনিধি,লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরঃ লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ থেকে মতিরহাট পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে পথচারিদের নাকে ইলিশের গন্ধ। গত দেড় মাসে কখনও রাত আসেনি এ সড়কে ।প্রতি ঘন্টায় হাজার সিএনজি, ছোট বড় ট্রাক, মোটরসাইকেল প্রবেশ এ সড়কে। এ রকম চিত্র ২৪ ঘন্টাই। ইলিশ বোঝাই গাড়ির অত্যাচারে বিরক্ত এলাকাবাসি। শতশত গর্তের কংকালসার এ সড়কটি এবার ইলিশের চাপে এবার শেষ।সুযোগ বুঝে সিএনজি চালকরা ও চালাচ্ছেন অত্যাচার। সবই ইলিশ কেন্দ্রিক। এত ইলিশ জেলে আর এলাকাবাসি দেখেনি আগে।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অসংখ্য নারী পুরুষ দেখে মনে হয় যেন এক জনস্রোত। যে জনস্রোত মূলত ইলিশ ক্রেতাদের জনস্রোত। মতিরহাট ঘাটেও জোয়ার-ভাটার তালে তালে প্রায় ২৪ ঘন্টাই কেনাবেচা হয় ইলিশ।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান হতে জানা যায়, মতিরহাট ঘাটটি বর্তমানে বৃহত্তম নোয়াখালির ইলিশ বেচাকেনার সবচেয়ে বড় ঘাট। প্রতিদিন দেশের প্রায় ৪০ জেলার জেলে, ক্রেতা বিক্রেতা মূখরিত থাকে এ ঘাট। যেখানে ইলিশ মৌসুমে প্রতিমাসে কমপক্ষে ১শ ৫০ কোটি টাকার ইলিশ হাতবদল হয়।
ঘাটের ব্যবসায়ীরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ইলিশের আকারও বেশ বড়। এখন ৫শ গ্রাম সাইজের ইলিশ প্রতি হালি (৪টি) সর্বোচ্চ ৫-৬শ টাকায়, ১ কেজি সাইজের প্রতি হালি ১৫-২৮শ টাকায়, জাটকা ১৩০-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চলতি সেপ্টেম্বর মাস থেকেই ২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। তাই এ সুযোগে যে যা পারছে ইলিশ কিনে খাবার জন্য মজুদ করছে।
শুধু মতিরহাটই নয় লক্ষ্মীপুরের রায়পুর, কমলনগর, রামগতি এবং সদর উপজেলার মেঘনাপাড়ের ৬০ কিমি এলাকার আরো ১০টি ঘাটে একই চিত্র আছে। কমলনগর উপজেলার মতিরহাট, বাত্তিরঘাট, কটরিয়া, লুধুয়া-ফলকন, রামগতি উপজেলার রামগতি ঘাট, টাংকীর ঘাট, আলেকজান্ডার সেন্টার খাল, সদর উপজেলার মজুচৌধুরীরহাট, রায়পুরের চরবংশী এবং চর আবাবিলের দুটি ঘাটে ইলিশ ক্রয় বিক্রয় হয়। জেলার সবচেয়ে বড় ঘাট মতিরহাট। আবার লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছোট-বড় প্রায় ৩০টি মাছঘাটে জেলেরা মাছ বিক্রি করছেন।
আর মেঘনা নদীর মাছের ওপর নির্ভরশীল সরকারি তালিকায় ৩৬ হাজার ৭০০ জেলে থাকলেও নদী ও মাছ নির্ভরশীল সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার হবে বলে দাবি জেলে কমিউনিটির।
স্থানীয় ভাবে জানা যায়, মেঘনা উপকূলীয় লক্ষ্মীপুর অঞ্চলের জেলেরা বর্তমানে ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
রামগতি উপজেলার রামগতি ঘাট, টাংকীর ঘাট, আলেকজান্ডার সেন্টার খাল ঘাটের জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ায় তাদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে। ইলিশের ঘাটগুলোতে ইলিশ মাছ আহরণ ও বাজার জাতকরণের সাথে জড়িত মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরের উপকূলের হাজার হাজার জেলে এবং ব্যবসায়ীরা ব্যস্ততার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। সেই সাথে বরফকল ও সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা অনেক ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, জাটকা নিধন প্রতিরোধের কারণে এবার মাছের আকার বড় হয়েছে। অন্যদিকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ’চলতি ইলিশ মৌসুমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকেও যথেষ্ট নজরদারীর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং নদীতে ও জলদস্যুদের কে মনিটরিং করা হচ্ছে।
এদিকে প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের সময় ১৫ দিন থেকে বৃদ্ধি করে এবার ২২ দিন করা হচ্ছে। ১৯৮৫ সালের মাছ রক্ষা ও সংরক্ষণ বিধি সংশোধন করে সময় ৭ দিন বাড়ানো হচ্ছে। এবার আশ্বিন মাসের প্রথম চাঁদের পূর্ণিমার দিন এবং এর আগে ৪ ও পরের ১৭ দিনসহ মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ ছিল। এ সময়ে ইলিশ ধরা ও বিক্রির পাশাপাশি সরবরাহ ও মজুদও নিষিদ্ধ থাকে। এ আদেশ অমান্য করলে কারাদন্ড ও জরিমানা গুনতে হয়।
0Share