নিজস্ব প্রতিনিধি: ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান। জার্মানির বিখ্যাত সিভিল করসালটিংই ফার্ম ইপ্রপ্লান (iproplan) কোম্পানির ইন্টারন্যাশনাল প্রোজেক্ট ম্যানেজার পদে কর্মরত। পাশাপাশি ইউরোপের বঙ্গবন্ধু ইঞ্জিনিয়ার এন্ড স্পেশালিস্ট কাউন্সিলের সাংগঠিনিক সম্পাদক এবং জার্মান আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলটোয়েন্টিফোরের ইউরোপ বিষয়ক আলোচক।
দেশের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের টিওরী গ্রামে।
ইউরোপে পাড়ি জমানোর আগে তিনি বাংলাদেশের সাকো ইন্টারন্যাশনাল এর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট) পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ২০০৪ সালে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে জার্মানিরমিউনিখ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স পাশ করেন।
পেশাগত জীবনে দারুন সফল এই প্রকৌশলী একজন সাধারন তরুন থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হয়ে ওঠার অসাধারন গল্প উঠে আসে তারই বয়ানে। সাক্ষাৎকারের গল্প রূপের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
ছোটবেলা থেকেই আমি খুবই অন্তর্মুখী স্বভাবের ছিলাম। আশেপাশের মানুষগুলো কথা বলতো, আমি শুনতাম। মনে হতো তাদের তুলনায় আমি কত কম জানি! কিন্তু একসময় বুঝেছি, বেশি কথা বলা মানেই বেশি জানা নয়, বেশি কিছু পারা নয়। নিজের অজান্তেই হয়ত আমি চারপাশ থেকে শিখছিলাম বড় কোনো উপলক্ষের জন্য।
রুয়েটজীবনের শুরু থেকে ভেবেছি, এতদিন যা কিছু শিখেছি এবার তা বাজিয়ে দেখার পালা। ক্লাসের শুরুতেই ক্লাস প্রতিনিধি হতে আগ্রহী কারা জিজ্ঞেস করেছিলেন একজন শিক্ষক। অপরিচিত কেউই আগে দাঁড়াতে ইচ্ছুক ছিল না। দাঁড়িয়েছিলাম আমি। আজ সেদিনের ঘটনাকে মূল্যায়ন করলে দেখি, এই ছোট ছোট কাজে দায়িত্ব নিতে পারার ব্যাপারগুলোই মানুষকে বিজেতা করে তোলে।
একবার বাসে ঢাকা যাবার পথে এক মধ্যবয়স্ক লোক সহযাত্রী হলেন। আমি অপরিচিত মানুষদের সাথে পরিচিত হতে ভালোবাসতাম। স্বভাববশত তার সাথে পরিচিত হলাম। আলাপচারিতায় তিনি বেশ মুগ্ধ হলেন। পরে জানলাম তিনি এক কোম্পানির বড় পদে কর্মরত। তারপর থেকে তিনি আমার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন, রাজশাহী আসলে দেখা করতেন। এবং পাশ করার পরেই তিনি তার কোম্পানীতে চাকুরি অফার করেন।
আমার মধ্যে একটা ব্যাপার ছিল, যা মন থেকে করতে চাইতাম, চাইতাম সেটাতে যেন আমিই বেস্ট হই। তার কোম্পানী থেকে আমি চাকুরী নিই জনৈক সাবেক মন্ত্রীর এক কন্সট্রাকশন কোম্পানীতে। সেখানে আমার ব্যাচমেট, সিনিয়র, দেশের প্রায় সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছিলেন। এবং বুঝতেই পারছেন, সবার আগে পদন্নতি পাই আমি। কোম্পানীর গুরুত্বপূর্ন সভা, ব্যবসায়িক প্রস্তাবনায় ডাক পড়ত আমার। একবার এক বিদেশী ক্লায়েন্টের সাথে সভায় প্রতিনিধি পাঠানো হবে। অফিস থেকে বের হয়ে দেখি আমার জন্যে এক বিলাসবহুল গাড়ি অপেক্ষা করছে।
চাকরী যখন ভালো রকম অবস্থানে, তখন আমার মনে হলো আমার স্বপ্ন আরো বড়। আমি চলে আসি জার্মানীতে। এখানে এমএসসি শেষ করে এখন কর্মরত আছি এক বহুজাতিক কোম্পানীর ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে।
এখনো যখন আয়নার সামনে দাঁড়াই, দেখতে পাই সেই অন্তর্মুখী তরুনকে। পৃথিবী যখন তার উপর ভরসা করতে পারে নি, তখন সে নিজের উপর ভরসা রেখেছিল। শেষ হয়ে যেতে দেয় নি তার স্বপ্নকে।
বর্তমানদের জন্য কিছু বলতে বললে বলব, তোমরা প্রত্যেকে স্পেশাল। নিজের স্পেশালিটিকে খুঁজে বের করো। কাজ করো সেটার উপর। তোমার প্রচেষ্টাই একদিন তোমাকে স্বপ্নের মুখোমুখি করে দিবে। সকল স্বপ্নচারীর জন্য শুভকামনা রইলো।
0Share