সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
লক্ষ্মীপুরে ৫ হাজার “মানতা”উপজাতির অন্ধকার জীবন, নৌকা থেকে লাফ দিলেই হয় তালাক !

লক্ষ্মীপুরে ৫ হাজার “মানতা”উপজাতির অন্ধকার জীবন, নৌকা থেকে লাফ দিলেই হয় তালাক !

0
Share

লক্ষ্মীপুরে ৫ হাজার “মানতা”উপজাতির অন্ধকার জীবন, নৌকা থেকে লাফ দিলেই হয় তালাক !

সানা উল্লাহ সানু: জলেই জন্ম- মৃত্যু, জলেই বসবাস, নাগরিক হয়েও তারা নিজ দেশে পরবাস। নূন্যতম নাগরিক সুবিধা বা মৌলিক অধিকার যথা বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ খাবার পানি তো নেই বরঞ্চ অনিয়ন্ত্রিত জন্মদান, বাল্য আর বহু বিবাহ এবং কুসংস্কারে ভরপুর আধুনিক যুগে সামনে থেকেও লোকচক্ষু আড়ালে গহীন এক অন্ধকার জনগোষ্ঠীর নাম “মানতা’’ সম্প্রদায়।  জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র আর ঠিকানাবিহীন বিচ্ছিন্ন এ গোষ্ঠী শুধু লক্ষ্মীপুর জুড়ে রয়েছে কমপক্ষে পাচঁ হাজার আর পুরো মেঘনাজুড়ে প্রায় অর্ধ লক্ষ। সজ্ঞায় না মিললেও জীবনাচার দেখে মনে হয় যেন তারা এ যুগের জলচর এক নতুন উপজাতি।
manta

সম্পূর্ন ভূমিহীন আর জেলে হওয়া সত্ত্বেও এরা পায় না কোনো ভিজিএফ কার্ড, বয়স্ক বা বিধবা ভাতা কিংবা কর্মসৃজনের মতো কোনো কর্মসূচি অথবা ভাগ্যে জোটেনি কোন আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই। উল্টো অভিযোগ রয়েছে তাদের নামে ভুয়া তালিকা তৈরি করে সুবিধা নিচ্ছে মেঘনাপাড়ের কিছু জনপ্রতিনিধি।
স্থানীয়দের ধারণা এ বিশাল বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল ধারার বাহিরে রেখে সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা কিংবা দেশের উন্নয়ন মোটেও সম্ভব নয়। ঠিকানাবিহীন এবং সভ্য সমাজের আলো বিমূখ এ জনগোষ্ঠীর জীবন ধারণের নানা দিক নিয়ে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মেঘনাপাড়ে অনুসন্ধান করতে গেলে জানা যায় জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মেঘনার ভাসমান নৌকায়ই কেটে যায় তাদের ঠিকানা বিহীন জীবন।

মানতা:
মৌলিক অধিকার ও সকল নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত সভ্য সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এ অন্ধকার জনগোষ্ঠ কে স্থানীরা বলে ভাসান জেলে। কিন্তু তারা নিজদের পরিচয় দেয় “মানতা” নামে।
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থেকে শুরু করে চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনার বিস্তৃতি প্রায় ৬৫ কিমি। মেঘনা বুকে হাজার হাজার জেলে নৌকার মধ্যে এমন কিছু নৌকা আছে যার চালক স্বামী-স্ত্রী, ছেলে মেয়ে মিলে বড় এক পরিবার। এদের ঘর বাড়ি আর কর্মস্থল সবই নৌকায়। এরা সব সময়ই থাকে আমাদের সামনে অথচ যুগযুগ ধরে থাকছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। দেশে শতশত মিডিয়া থাকলেও কখনও মিডিয়ার চোখে পড়েনি বলে তাদের অভিযোগ।
অথচ ডাঙ্গাবাসীর প্রতিদিনকার রসনা বিলাসের হাজার রকমের নানা স্বাদের সামুদ্রিক মাছ জোগান আসছে এদের হাত হয়ে। ডাঙ্গার বিত্তবানদের রসনা বিলাসে প্রতিনিয়ত নিয়োজিত থাকলেও নিজেদের কোন রসনা নেই। ইসলাম ধর্ম অনুসারী হলেও জীবিকার প্রয়োজনে তাদের ধর্ম ও যেন অস্তিত্ব সংকটে।
সরেজমিনে গিয়ে মেঘনাপাড়ের স্থানীয় জেলে, মাছের আড়ৎদার, ঘাটের ব্যবসায়ী আর মানতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থেকে রামগতি পর্যন্ত মেঘনা নদীতে প্রায় চার শতাধিক নৌকায় পাচঁ হাজারের মতো এ মানতা সম্প্রদায় সপরিবারে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। যুগযুগ ধরে বংশ পরস্পরায় চলে আসছে তাদের এ পেশা।
সেপ্টেম্বরের (২০১৫) প্রথম সপ্তাহে সরেজমিনে কমলনগর উপজেলার মতিরহাট ঘাটে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ভীড়ে রয়েছে শতাধিক মানতা নৌকার বহর। বহরের এক সরদার কাশেম (৬০) মানতা জানায়, নিজস্ব ঘর-বাড়ি বা জমি না থাকায় এরা ডাঙ্গায় বসবাস করে না। নৌকাই ঘরবাড়ি, এখানেই ৭ স্ত্রী আর ১১ ছেলে মেয়ে নিয়ে ১৯ জনের সংসার। মাছ ধরে, বিক্রি করে আর খায় এটাই জীবন। শুধু খাওয়া এবং স্ত্রী উপভোগ ছাড়া ডাঙ্গাবাসীর মতো আর কিছুই চিন্তা করে না তারা। এখানেই সব শান্তি তার।
কারা কিভাবে এবং কেন মানতাঃ এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে আরেক সরদার মোতালেব (৬৫) জানান, বেদের মধ্যে রয়েছে অনেক উপ-সম্প্রদায়। মালবৈদ্য, বাজিকর, শালদার বা মানতা। মানতারা মূলত নদীতে মাছ ধরে।

এ প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে মানতা সর্ম্পকে বই পুস্তকে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ডক্টর রহমান নাসির উদ্দিন এ প্রতিবেদক কে জানান, মানতাদের সর্ম্পকে বিস্তারিত কোন গবেষণা না থাকলে ও নৃ বিজ্ঞানের ভাষায় মানতাদের কে “পেশাবৃত্তিক ক্ষুদ্র সম্প্রদায় নামে অভিহিত করা যায়”।

এ প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে মানতা সর্ম্পকে আার কোন ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে নিজে কিভাবে এ জনগোষ্ঠীতে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে তার বর্ণনা দিতে গিয়ে কাশেম মানতার ৩ নং স্ত্রী পিরোজা (৪০) জানান, ছোট বেলায় মেঘনা আমাদের ভিটেমাটি নিয়ে যায়। আমি তখন অবিবাহিত। কাশেম মানতার সাথে ৩নং স্ত্রী হিসাবে ঘর বাধি। সে নদীতে থাকে জাতে মানতা তখন থেকে আমিও তার সাথে হয়ে যাই মানতা।

মোতালেব মানতাসহ আরো কয়েক জনের বক্তব্য হতে নিশ্চিত হওয়া যায়,‘মানতারা জীবনের কোন না কোন সময় নদী ভাঙনের শিকার। উপকূলীয় বিভিন্ন নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত মানুষরাই সহায় সম্পদ হারিয়ে উপায়ন্তর না পেয়ে জীবন বাচাঁতে এক সময় মানতা সম্প্রদায়ে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। আর এভাবেই উপকূলীয় এলাকায় প্রতি বছর জীবন সংগ্রামী নতুন মানতাদের সম্প্রসারণ ঘটে। মানতায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর বহর নিয়ে এরা দেশের বিভিন্ন স্থানে মাছ ধরতে ঘুরে বেড়ায়। অনেক সময় জনমানবহীন দ্বীপাঞ্চলে ও এরা ভীড় করে।

জীবন ও জীবিকার পদ্ধতিঃ সর্ম্পকে জানতে চাইলে জাহেদা খাতুন (৪৫) জানান, নদীর উচু ঢেউ কিংবা প্রাকৃতিক দূর্যোগে শক্ত হাতে নৌকা চালাতে পারি। জলের মতি-গতির সাথে সখ্যতা আমাদের জন্মগত অধিকার। জাহেদা খাতুন আরো জানান, ছোট বয়সেই আমার মা রজবি এবং বাবার কাছে মাছ ধরার হাতেখড়ি পাই। কোনদিন স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। এগার বছর বয়সে বিয়ে হয় সহযাত্রী নৌকার যুবক রইজলের সাথে।

করুন সুরে তিনি বলেন, নদীর বুকে ভাসমান এ জীবন খুবই কষ্টের। ঝড় তুফানেও বসে থাকার জো নেই। এখন নদীতে আগের মতো মাছ নেই। মাছ ক্রমে কমে আসছে। ইলিশে অনেক লাভ। কিন্তু আমাদের পুঁজি নেই।

কোন কোন দিন দু-তিনশ টাকার মাছ বিক্রি করি চাল,ডাল কিনে সংসার চালাই। আবার বহু দিন শূন্য হাতে বৈঠা চালাই। যখন নদীতে মাছ কম থাকে অথবা ইলিশ অভিযান চলে তখন আমাদের কষ্টের দিন দীর্ঘ হয়। কিন্তু কি করব ? কোথায় যাব ? কি খাব ? আমাদের কে কেহ সাহায্য করে না।

মানতারা নদীতে কি করে ? জানতে চাইলে মধ্য বয়স্ক লোকমান বলেন, ভাসান বা মানতারা মূলত ছোট বা মইয়া জাল ও বরশি দিয়ে মাছ ধরে। নদীপাড়ের স্থানীয় বাজারে সে মাছ বিক্রি করে। আমরা প্রধানত, চিংড়ি, পোয়া, ট্যাংরা, গলসা, পাঙ্গাশ, কাওন মাছ ধরি। খাদ্য কেনার পর যা থাকে তা দিয়ে জাল আর নৌকা মেরামত করি। ঠিকানাবিহীন জীবনের কারণে কোন আড়ৎদার আমাদের দাদন না দিলেও শোষণের হাতিয়ার প্রয়োগ করতে কার্পণ্য করে না তারা।
এ অভিযোগ করে রহিমা (৩০) তিনি জানান, কখনও কখনও বেশি এবং বড় মাছ পেলে স্থানীয় আড়ৎদার বা প্রভাবশালীরা কমমূল্যে তাদের সে মাছ নিয়ে যায়। ইদানীং স্থানীয় জেলেরা ও নদীর বিভিন্ন স্থানে জাল পাততে মানতাদের বাধাঁ দিচ্ছে। মাঝে মধ্যে তাদের নৌকায় জল দস্যুদের শিকার হয়। দস্যুবাহিনী তাদের নারী এবং শিশুদের কেও নির্যাতন করে।
বৈচিত্র্যময় বিয়ে ও তালাকঃ প্রতিদিনকার কাজের বাহিরেও এদের স্বাভাবিক জীবন যাপন সর্ম্পকে জানতে চাইলে, হারুন অর রশিদ (৪৫) জানান, কর্ম জীবন যা ই হোক জীবনের নানা ক্ষেত্রে এ সম্প্রদায়েরও রয়েছে বৈচিত্রময় কিছু রীতি। তিনি জানান মুসলমান হলেও আমাদের বিয়ের রীতি ডাঙ্গাবাসী থেকে একটু ভিন্ন। এক নৌকা থেকে অন্য নৌকায় পছন্দের মেয়েটিকে তুলে নিলেই বিয়ে হয়ে যায়। এরপর হুজুরের সাহায্যেও মাঝে মাঝে কলেমা পড়ানো হয়। আবার দাম্পত্য কলহের কারণে যদি ছাড়াছাড়ি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে ওই বধূটি স্বামীর নৌকা থেকে লাফ দিয়ে বাবার নৌকায় গেলেই তালাক হয়ে যায়। তাদের বিয়ে কোন রেজিস্ট্রি হয় না।

বাল্যবিয়ে ও বহু বিয়ে তাদের অন্যতম রীতি। তেমনটিই জানালেন, মতিরহাট ঘাটের নৌকায় বসবাসকারী শতাধিক মানতা পরিবারের সরদার জহির উদ্দিন মাঝি (৫০)। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৭ টি বিয়ে করেছেন। তার ৫ স্ত্রী মাছ ধরে বিক্রীত টাকা তুলে দেয় তার হাতে। ৫ স্ত্রীকে নিয়ে বেশ সুখেই আছেন বলে তিনি জানান। তার শেষ বউ ১৩ বছর বয়সী রুপজান। এ বহরে যত নারীর সাথে কথা হয় প্রত্যেকেই স্বীকার করেন ১১-১২ বছর বয়সে তারা বিয়ের পিড়িতে বসেছেন।

কমলনগরের চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং মতিরহাটের ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান লিটন  জানান, মানতাদের বিয়ের সময় গাঙ্গ পাড়ের কোন বাড়ির বাগানে বিয়ের আসর বসে, তখন তারা গান বাজনা করে কিন্তু বিয়ের খানাপিনে হয় ওই নৌকাতেই।
জন্ম নিয়ন্ত্রন এবং সন্তান লালন সর্ম্পকে বলতে গিয়ে বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় জোবেদা (৩০) বলেন, তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ করেই না। জন্ম থেকেই নদীর জলে খেলা করতে করতে বড় হওয়া বকুল বেগম (৩৫) জানান, ১৩ বছরের স্বামীর সংসারে হাল ধরতে নৌকার হাল ধরতে হয়েছে। কিশোরী বয়সের বিবাহিত জীবন আজ জীর্ণ ছিন্ন, রোগাক্রান্ত। রেহাই পাচ্ছে না সংসার যন্ত্রনা থেকে। ১১ সদস্যে পরিবারে ৯ সন্তানের জননী তিনি। মতিরহাটের রহমত (৪০), রমা (২৩) সহ শতাধিক নৌকায় প্রায় পাচঁ শতাধিক লোকের বাস। প্রত্যেক নৌকাই একটি সংসারে ১ স্বামীর অধীনে কমপক্ষে দু স্ত্রী আর গড়ে ৮-৯টি সন্তান রয়েছে। কোন কোন নৌকায় একাধিক সংসার ও রয়েছে। যা সভ্য সমাজ কল্পনা ও করতে পারে না।

সন্তান গর্বধারণ আর লালন বিষয়ে জানাতে গিয়ে, রমা (২৩) বলেন, তার সন্তান ৩ জন। তিনি প্রতি সন্তান প্রসবের কয়েক ঘন্টা আগে ও নদীতে মাছ ধরেছেন। সরেজমিনে গিয়ে এ রকম দু জন সন্তান সম্ভবা নারী জেলে পাওয়া গেছে । তাদের কথা মতো বুঝা গেল সন্তান প্রসবের বাকী আর মাত্র কয়েক দিন কিন্তু তারা এখনও ইলিশ ধরছে। তারা জানান, প্রসবের সময়ে অনেকেই কোন ঔষধ পথ্য ব্যবহার করে না। নৌকা বা নদী পাড়ের কোন ডেরায় তাদের প্রসব হয়।
শিশু সন্তান লালন-পালন সম্পর্কে তারা জানান, পানিতে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য শিশু সন্তানকে তারা নৌকার চৌইয়ের সাথে বেঁধে রাখে। আধুনিক যুগেও অন্ধকার এ জনগোষ্ঠীর শিশু-কিশোররা নদীতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিলেও বয়স্কদের তীরে এসে ঝোপ-জঙ্গলে কিংবা নদীতে সেই কাজটি সারে। এদের কোন শিশুদের স্কুলে যাওয়ার সুযোগ নেই। বড় হয়ে তাদের বেছে নিতে হয় মা-বাবার পেশা। আদমশুমারীতে ও এদের সঠিক হিসাব হয় না। হরতাল বা ভোটের রাজনীতিও নেই তাদের । কে জিতল আর কে হাড়ল সে খবর তারা রাখে না তারা।

নিবাচন কমিশনের ওয়েব সাইট থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার পায় ভাসমান এই সম্প্রদায়। কিন্তু তাদের অভিযোগ এদের খোঁজ রাখেনি কোনো জনপ্রতিনিধি।

প্রতি পদে বঞ্চিত : রইজল মাঝি জানান, বিগত বছরে দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় গুলোতে এদের অনেক ক্ষতি হয়েছে; অনেকে মারা গেছেন, জাল আর নৌকা হারিয়েছেন। স্থানীয় জেলেরা সরকারী কিছু সহায়তা পেয়েছেন। কিন্তু পরিচয়হীনের কারণে এদের কথা মূলধারার কোন মিডিয়ায় প্রকাশ পায়নি।

তিনি আরও জানান, সামান্য ঝড়-তুফান এলেই তাদের ওপর আকালের খড়গ নেমে আসে, তখন দুর্ভোগের সীমা থাকে না। জন্মগত মাছের পেশা ইচ্ছা করলেই ছাড়তে পারছে না। তাদের ভাষায় ঈদ তাদের জীবনে কোনো আনন্দ আনে না। ঈদের দিনেও মাংস দিয়ে দুই বেলা পেট ভরে ভাত খাওয়ার স্বাদ নিতে পারে না তারা। ছেলে মেয়েদের গায়েও উঠে না নতুন জামা-কাপড়। ঈদ আইলেই আমাগো কষ্ট বাইড়া যায়। তহন আমাগো পোলাপানের দিকে চাইতে পারি না।’ জানালেন ওই ঝরিনা।

তার ভাষায়, ডাঙ্গার গরিবেরা বিভিন্ন সময় জাকাত, ফেতরা বা দান খয়রাতের মতো সাহায্য সহযোগিতা পায়। শীতের মৌসুমে অনেকে শীত বস্ত্র দিয়ে যায়। অথচ আমাদের এমন পোড়া কপাল, আমরা সব কিছু থেকেই বঞ্চিত। তার ভাষায় শীত, গ্রীষ্ম, রোদ, বৃষ্টি সময়ই আমরা অসহায়। আমাদের খবরও জানে না কেহ।

নিজ সম্প্রদায়ের মৃত্যু সর্ম্পকে জানাতে গিয়ে জানাতে গিয়ে কাশেম সরদার জানান, মানতাদের মৃত্যু হলে আগেকার দিনে কলা গাছের ভেলায় লাশ ভাসিয়ে দেয়া হত। আজকের দিনে নদীর পাড়ে বা কোন পরিত্যাক্ত ভিটে দানকৃত ভূমিতে ঠাঁই মিলে লাশটির। কেহ জমিদান না করলে বহরের সবাই চাঁদা দিয়ে ২-৩ হাজার টাকায় কবরের জমি কিনে মাটি দেয়। এ ভাবে মানতা নামের সংগ্রামী এক যোদ্ধার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

মানতারা অভিযোগ করে বলেন, ইতোপূর্বে দেশের কয়েকটি জেলায় বেশ কয়েক জন মানতার নামে আশ্রয়কেন্দ্রে কক্ষ বরাদ্ধ নিয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। কিন্তু হস্তান্তরের সময় আর তাদের নাম পাওয়া যায়নি। তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের নামে বরাদ্ধকৃত কক্ষ থেকেও।

মানতাদের দাবি আমরা এ জীবন চাই না, যুগযুগ ধরে বংশপরস্পরায় আমরা বঞ্চিত। আমরা বাঁচতে চাই, আমরা আশ্রয় চাই। আমরা চাই দেশের কোন খাস জমি বা নির্ধারিত কোন স্থানে আমাদের কে সরকার পুর্নবাসিত করা হোক, আমাদের শিশুরা বেড়ে উঠুক ভবিষ্যতের নাগরিক হয়ে।

[toggle title=”মানতাদের জীবনের করুন দিক গুলো নিয়ে প্রশাসনের ভাষ্য জানতে চাইলে” state=”open” ]কমলনগর উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল আওয়াল বলেন, ভাসমান এ জেলে সম্প্রদায় সর্ম্প কে আমি মোটামুটি অবগত। যতটুকু জানি, এরা স্থায়ীভাবে কোন এলাকায় না থাকায় বিগত দিনে তারা সকল নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার সমাজ সেবা অধিদপ্তরের একটি বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে এ রকম বিচ্ছিন্ন সম্প্রদায় কে মূলধারায় নিয়ে আসার চেষ্টা শুরু করেছেন। এ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে যদি সহযোগিতা পাই, তবে অবহেলিত “মানতা” সদস্যদের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ করে শিশুদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকমের সহযোগিতা করা হবে। পাশাপাশি সমাজের বিবেকবান মানুষদের কে এগিয়ে আসতে হবে।[/toggle]

[toggle title=”লক্ষ্মীপুর জেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকতা সুনীল চন্দ্র ঘোষ বলেন,” state=”open” ]ইলিশ অভিযানের সময় এই সম্প্রদায়ের কারণে ঔ সময় অভিযান শতভাগ সফল করা যায় না। তাছাড়া জেলে অথবা কোন ধরণের আইডি না থাকায় তাদের কে ওই সময়ে বিশেষ সুবিধা দেওয়া সম্ভব না। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সবাইকে ভাবতে হবে। কারণ এদের বাদ দিয়ে কোন অর্জনই সম্ভব না। [/toggle]

জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বলেন, ইতোমধ্যে মেঘনা সীমানায় বসবাসকারী ভাসমান জেলেদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে আমরা বিষয়টির একটা পরিস্কার ধারণা পাবো।

[toggle title=”এ ব্যাপারে ফলকন ইউপি চেয়ারম্যান এএনএম আশরাফ জানান” state=”open” ]মানতা সম্প্রদায়ের বিষয়ে সরকারি কোনো নির্দেশনা না থাকায় ত্রাণসহ কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করা যাচ্ছে না।’ তিনি আরও জানান, সরকার চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে যে সহায়তা দিচ্ছে তা সংশিষ্ট ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য। এক্ষেত্রে মানতা সম্প্রদায়ের লোকজনের স্থায়ী বসবাসের কোনো ঠিকানা না থাকায় তাদের বিষয়ে করার কিছুই নেই। তবে সরকার যদি নির্দেশ দেয় তাহলে অবশ্যই তাদের ত্রাণসহ সব সুবিধা প্রদান করা হবে বলে তিনি জানান।[/toggle]

প্রতিবেদন আরও সংবাদ

এক মেশিনেই ৮০ রোগের চিকিৎসা দেন রায়পুরের আবু তাহের সিদ্দিক !

লক্ষ্মীপুরের নারী ও কিশোরীদের হাতে তৈরি ৫কোটি টাকার টুপি রপ্তানি হয় মুসলিম বিশ্বে

লক্ষ্মীপুর থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত মেঘনা নদীতে ১৬ চর | কমেছে ইলিশ; নদীপাড়ের মন্দার প্রভাব

লক্ষ্মীপুর থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত মেঘনা নদীতে ১৬ চর | চরে আটকে যাচ্ছে জীবন ও অর্থনীতি

লক্ষ্মীপুরে বছরে ১১ কোটি ঘনফুট উর্বর মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

প্রবাসী স্বামী ওপর জেদ করে কোলের শিশুকে রেখে যান ভিক্ষুকের কোলে; জানিয়েছে শিশুর মা

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Chief Mentor: Rafiqul Islam Montu, Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu.
Muktijudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794 822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com