নিজস্ব প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশের পুরস্কার ঘোষিত সন্ত্রাসী ও হত্যাসহ একাধিক মামলার পলাতক আসামী জিসান বাহিনী প্রধান সোলায়মান উদ্দিন জিসান। ২৩ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার
রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে তার লাশ পাওয়া যায়। হত্যা, চাঁদাবাজী, অপহরন ডাকাতি মুক্তিপণ আদায় ও পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৪৪টি মামলা রয়েছে।
কে এই জিসান: এক সময়ে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সোলায়মান উদ্দিন জিসান সক্রিয় ছিলেন। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজে পড়াকালীন সে জেলা ছাত্রদলের পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
তারুন্য আর রাজণীতি কে পূজিঁ করে তিনি জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে। ছাত্রদলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে ২০০৪ সালে তাৎকালীন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাইন উদ্দিন হামীম ও সাধারন সম্পাদক মোঃ কামরুজ্জামান সোহেল স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জিসানকে জেলা ছাত্রদল থেকে বহিস্কার করা হয় ।
ছাত্রদলের পদ থেকে বহিস্কারের পর জিসান ২০০৬ সালের শেষের দিকে সৌদি আরবে চলে যান । চার বছর বিদেশে অবস্থান করার পর ২০১০ সালের শেষের দিকে চলে আসেন নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের লতিফপুরে।
২০১১ সালে আবারো শুরু করেন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চল, চন্দ্রগঞ্জ, দেত্তপাড়া, লতিফপুর, পাচপাড়া, নোয়াখালী জেলার চাটখিল ও বেগমগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলেন জিসান বাহিনী নামে গড়ে তোলেন একটি শস্ত্রসন্ত্রাসী বাহিনী। সে বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল আনুমানিক ১শ ৫০। এ বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ যারা বিএনপি এবং আওয়ামীলীগ সমান সমর্থক ।
আধিপত্যা বিস্তার, ভাগবােটায়ারাকে কেন্দ্র করে জিসান বাহিনী থেকে বের হয়ে আলাদা বাহিনী গড়ে তোলেন ডাকাত নাছির বাহিনী। এ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা অন্তত: দেড়’শ ও বেশি।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্র জানায়, জিসান বাহিনী ও ডাকাত নাছির বাহিনীর চাঁদাবাজি,অপহরন, ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অতিষ্ট ছিল লক্ষ্মীপুরের পূর্বাঞ্চলের রাজনীতিবিদ,ব্যবসায়ী,স্কুল শিক্ষক ও সাধারন মানুষ।
রেহাই পায়নি পাশ্ববর্তী জেলার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ও চাটখিল উপজেলার সাধারন মানুষও। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নাছির ও জিসান বাহিনীর মধ্যে প্রায় গোলাগুলি হত। এ ছাড়া গত এক বছরে এ দুই বাহিনীর সন্ত্রাসীদের মধ্যে পুলিশের অসংখ্যা বার গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
নাছির ও জিসানকে ধরতে চন্দ্রগঞ্জ এলাকায় অভিযানে গেলে পুলিশের সাথে রাত ব্যাপী বন্দুকযুদ্ধ হত। এর পর নাছির এলাকা থেকে গা ঢাকা দেয়। কিন্তু সোলায়মান উদ্দিন জিসান এলাকায় অবস্থান করেন। সম্প্রতি এ দুই বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধের বলি হয়েছেন সাধারন মানুষ,স্কুল ছাত্রসহ অনেকেই। আবার পঙ্গু হয়েছে নিরীহ অনেক মানুষও। বাদ যায়নি পুলিশ সদস্যরাও। তবে এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি । নাছির বতর্মানে অন্য রাজনৈতিক পরিচয়ে আছে। অভিযোগ রয়েছে রাজনীতি কে পূজিঁ করেই জিসান এবং নাসির সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালিত করছিল। জিসান মরে গেলেও এখনও আছে নাসির।
জিসানের বর্বরতা: জিসান বাহিনীর সন্ত্রাসীদের হাতে নিমূর্মভাবে নিহত হন,লক্ষ্মীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহবায়ক মোঃ মহসিন, প্রতাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর স্কুল ছাত্র রবিউল ইসলাম, কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ছাত্রলীগ নেতা মুন্না, চন্দ্রগঞ্জ ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহবায়ক আবু নোমান, সর্বশেষ দেত্তপাড়ায় আব্বাছ উদ্দিন নামে এক ব্যাক্তিকে গুলি ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। পঙ্গুত্ব বরন করেন সাবেক ছাত্রদল নেতা ফরিদুল ইসলাম দিপুসহ অসংখ্য মানুষ।
লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ মিজান শাফিউর রহমান জানান, পুলিশের তালিকাভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সোলায়মান উদ্দিন জিসানের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর সদর, নবগঠিত চন্দ্রগঞ্জ থানা, নোয়াখালীর সুধারাম, বেগমগঞ্জও চাটখিল থানা সহ বিভিন্ন স্থানে হত্যা, চাঁদাবাজি, অপহরনসহ ৪৪টি মামলা রয়েছে। এ জিসান বাহিনীকে গ্রেফতারের জন্য একাধিক বার পুলিশ অভিযান চালালে পুলিশের সাথে বহুবার তার বাহিনীর গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশসহ বহু লোক গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।
প্রসঙ্গত: বৃহস্পতিবার রাতে র্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে জিসান গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামের মৃত আবু বক্করের ছেলে এ জিসান।
0Share