আব্বাছ হোসেন: রায়পুর, রামগতি, কমলনগর, রামগঞ্জ উপজেলা ও চন্দ্রগঞ্জ থানাসহ পুরো জেলাতে এখন মাদকের ছড়াছড়ি। অবাধে মাদক বিক্রির কারণে উঠতি বয়সী যুবকেরা এখন বিপদগামী হয়ে পড়েছে। মাদকের কালো ছায়া লক্ষ্মীপুর জেলার সর্বত্রই।
দৈনিক মানবজমিনের জন্য আব্বাছ হোসেন তার অনুসন্ধানে জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ফায়ার সার্ভিস অফিসের পার্শ্ববর্তী কবির হোসেন, আনু বাড়ি মসজিদ এলাকার বাদশা মিয়া, সাহাপুর গ্রামের মো. সবুজ, ৭নং ওয়ার্ডের বাঞ্ছানগর গ্রামের মরিয়ম বেগম, ডায়াবেটিস হসপিটালের পাশে মো. স্বপন, সওদাগর বাড়ির নজরুল ইসলাম, টুকা মিয়া ব্রিজের পাশে মো. মানিক, রামগতি থানার পাশে মো. হাফেজ, বুড়া কর্তার আশ্রমের পাশে অনিল চন্দ্র। কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ, সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চৌরাস্তা বাজারের মো. কামাল, রায়পুর উপজেলার জালিয়া বাড়ির জহির, মিস্টার, মোসলেম, রাখালিয়া এলাকার জয়নাল আবেদিন, রামগঞ্জ উপজেলার পদ্দা বাজার এলাকার খোকন, মিরগঞ্জ এলাকার মো. হারুনসহ অন্তত শতাধিক লোক মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
মাদক ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী ও টেকনাফ থেকে গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিল এনে এসব এলাকায় বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। এছাড়া চন্দ্রগঞ্জ মান্দারি ও জকসিন বাজারে মাদকের হাত বদল হচ্ছে বলে অনেকে জানিয়েছে। এদিকে স্কুল-কলেজ ছাত্র তথা উঠতি বয়সী যুবকেরা এসব মাদক গ্রহণ করে আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে জেলা মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের প্রশাসনের ভূমিকায় প্রশ্নবিদ্ধ রয়েছে লক্ষ্মীপুরে।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মাদক গ্রহণের কারণে একাধিক ব্যক্তি চাকরিচ্যুত হয়েছে, পরিবার ভেঙেছে। দিঘলী ইউনিয়নের মো. ইউসুফ নামের এক স্কুলছাত্র লেখাপড়া ছেড়েছে। মাদকের কারণে অনেকের পরিবারে নেমে এসেছে হতাশা ও অশান্তি।
জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত জুন মাসে রামগতিতে গাঁজাসহ সালাহউদ্দিন, সদর উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রাম থেকে মো. কিরণ, রায়পুর উপজেলার চরকাছিয়া থেকে সুলতান, একই উপজেলার হায়দরগঞ্জ এলাকার সাইদুল হক, চরবংশী এলাকা থেকে আল আমিনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ে ৬ জন কর্মকর্তা কর্মরত থাকলেও তিনজন সিপাহি নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত। আর বাকি তিন জনের বয়স ৫০ বছরের উপরে। অধিকাংশ সময়ে কর্মকর্তাগণকে সাক্ষ্য দিতে জেলার বাইরে যেতে হয়। অফিসে কোন ল্যান্ড কিংবা যাতায়াতের জন্য কোন গাড়ি নেই। সাপোর্ট না থাকায় যথাযথ ভাবে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
একটি সূত্র জানায়, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের পরিদর্শক আবদুল্যাহ ভূঁইয়া বিভিন্ন স্পট থেকে মাসিক টাকা আদায় করে। তিনি রায়পুর শহরের মুচি পাড়ার স্বপন, শ্যামল, রতন ও মঙ্গলী রানী থেকে মাসে দশ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে মানুষের মুখে মুখে। শহরের এক মাদক ব্যবসায়ী জানান, সদর উপজেলার ৪০টি স্পটে মাদক বেচা কিনা হয়। এতে প্রতিদিন মাদক বেচা কিনা হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা। একইভাবে জেলার অন্য উপজেলায়ও এভাবে বেচা-কিনা হয় মাদক। লক্ষ্মীপুর শহরের জেবির রোডের বাসিন্দা হাজী আমীর হোসেন দুলাল জানান, গাঁজা, ইয়াবা টেবলেট এবং ফেনসিডিল জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবাধে বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে যুব সমাজ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এর কুফলে সমাজে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটবে মারাত্মক ভাবে।
জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের এএসআই আফজাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান মাসে বিশ দিনে স্বাক্ষর দিতে বাইরে যেতে হয়। জনবল সংকট, প্রশাসন ও স্থানীয় অসহযোগিতার ফলে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। লক্ষ্মীপুর জজকোর্টের সিনিয়র এডভোকেট হারুনুর রশিদ ব্যাপারি জানান, মাদকের ছড়াছড়ি এত বেশি। যে কারণে সহজে পাওয়া যায় মাদকসহ নেশা জাতীয় দ্রব্য। জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান সাফিউর রহমান জানান, আইনশৃঙ্খলা উন্নয়ন ও মাদক নিয়ন্ত্রণে লক্ষ্মীপুর পুলিশ প্রশাসন জন সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। প্রতিদিন এ ব্যাপারে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ী ও এবং সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারে জিরো টলারেন্স পুলিশ। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
0Share