কাজল কায়েস:: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মজিবসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও মারধরের মামলা করে বিপাকে পড়েছে এক তরুনী ও তার পরিবার। মামলা প্রত্যাহার করতে আসামি ও তাদের লোকজনের
হুমকির মুখে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে অভিযোগ পরিবারটির।
এ দিকে মঙ্গলবার সকালে দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে জনতা ডিগ্রি কলেজের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে কলেজের কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও এলাকার শতাধিক লোক অংশ নেয়। মামলার বাদী উপজেলার পূর্ব দিঘলী গ্রামের কল্পনা (ছদ্ম নাম) ওই কলেজের কম্পিউটার অপারেটর।
আদালত সূত্র ও সংশ্লিষ্টরা জানায়, কল্পনা (ছদ্ম নাম)র সাথে ২০০৩ সাল থেকে শেখ মজিবের প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছে। উভয় পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি অবগত। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর বিকেলে কল্পনা (ছদ্ম নাম) বাড়িতে গিয়ে শেখ মজিব বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ সময় ওই বাড়িতে কেউ ছিল না। পরে মজিবকে বিয়ের কথা বললে, তিনি নির্বাচনে ইউপি চেয়ারম্যান বিজয়ী হলে বিয়ে করে ঘরে তুলে নিবে বলে জানান। পরে শপথ গ্রহণসহ বিভিন্ন অজুহাতে দেখিয়ে তিনি কালক্ষেপন করে।
গত ২৪ জানুয়ারি মজিব তার বাড়িতে লোক মারফত কল্পনাকে বিয়ে করবে বলে খবর দেয়। পরদিন সকালে কয়েক স্বাক্ষীকে তিনি ওই বাড়িতে গেলে তার (মজিব) পরিবারের সদস্যরা বিয়ে বিষয় নাকচ করে দেয়। এ সময় কল্পনা জানায়, তাকে বিয়ে না করলে তিনি বাড়ি ফিরবে না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মজিব, তার তিন ভাই কামাল খান, তৌহিদ খান ও দুলাল নিলুর ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাকে মজিব শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম করা হয়। পরে তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনালে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ ঘটনায় চন্দ্রগঞ্জ থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ অপারগতা প্রকাশ করে। পরে রবিবার (২৯ জানুয়ারি) কল্পনা (ছদ্ম নাম) বাদি হয়ে লক্ষ্মীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে শেখ মজিবকে প্রধান করে তার তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আদালত বিষয়টি জুডিশিয়াল তদন্ত করে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়।
কল্পনা (ছদ্ম নাম)র বাবা ব্যবসায়ী নুরুল আমিন বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকে আমরা চরম আতঙ্কে রয়েছি। বিভিন্ন লোক মারফতে আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। রবিবার রাত ১১টায় একটি গ্রামীণ ফোন নাম্বার থেকে আমার বাড়িতে ফোন করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
কল্পনা (ছদ্ম নাম) বলেন, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেখ মজিব আমার সব শেষ করেছে। তাদের নির্যাতনের ক্ষত আমার শরীরে রয়েছে। নির্যাতনের যন্ত্রনায় আমি ঘুমাতে পারছি না। আদালতের আমি ন্যায় বিচার কামনা করছি।
বাদির আইনজীবী ইফতেখার মাহমুদ ফয়সাল বলেন, আদালত বাদীর অভিযোগটি আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য বলেছেন। ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে দিঘলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মজিব মোবাইল ফোনে বলেন, একটি মহল আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। পরিকল্পিতভাবে আমাকে হেয় করতে এ মামলা করিয়েছে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসার চেষ্টা চলছে।
0Share