কাজল কায়েস: লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় এডিপি রাজস্ব ও থোক বরাদ্দের ৭৮ লাখ ৪৩ হাজার ৮০০ টাকার ঠিকাদারি কাজ ভাগবাটোয়ারা করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য ওই নেতারা শতকরা ১০-২০ টাকা হারে আদায় করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ মে) নিয়ম রক্ষার্থে পাতানো ১৯টি প্যাকেজে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের দরপত্র দাখিল করা হয়। এর মধ্যে একাধিক ভুয়া প্রকল্প রয়েছে বলেও জানা গেছে। এ নিয়ে সাধারণ ঠিকাদারদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ ক ম রুহুল আমিন, পৌরসভার কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন ওরফে এসপি দেলু সহযোগীদের নিয়ে টেন্ডারটি নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সংবাদকর্মীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১টা পর্যন্ত দরপত্র দাখিলের সময় থাকলেও এলজিইডি অফিসের দরজায় তালা ঝুলছিল। এ সময় অফিসে কেউ ছিল না। সামনে ৫-৬ অনুসারীকে নিয়ে চেয়ার পেতে বসে পাহারা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন। ওই অফিসে কেউ আসে কিনা, তিনি তা গতিবিধি লক্ষ্য করেছিলেন। দুপুর গড়ালেই ওই স্থান ত্যাগ করেন তিনি। এ বিষয়ে দেলোয়ার হোসেন প্রথমে বলেন, আমি আজ রামগঞ্জে নেই, পাহারা বসাব কীভাবে? পরে আবার বলেন, ইউএনও অফিসে একবার গিয়ে দেখা করে চলে এসেছি। টেন্ডার ওপেন হয়েছে, সমঝোতা করলেও ঠিকাদাররা করেছেন। কোন ঠিকাদাররা সমঝোতা করেছেন জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় এডিপি রাজস্ব ও থোক বরাদ্দের আওতায় ১৯টি প্যাকেজে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়।
৩ মে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৭৮ লাখ ৪৩ হাজার ৮০০ টাকার এ দরপত্র আহ্বান করেন। দরপত্র বিক্রির শেষ দিন ছিল বুধবার (১৭ মে) ও দাখিলের শেষ সময় ছিল বৃহস্পতিবার (১৮ মে) বেলা ১টা পর্যন্ত। বেলা ২টা দরপত্র খোলার সময় ছিল। দরপত্র আহ্বান করা প্রকল্পে উপজেলার নলকূপ স্থাপন, সীমানাপ্রাচীর ও টয়লেট নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাধারণ চারজন ঠিকাদার অভিযোগ করেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউএনও এবং এলজিইডির প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করে টেন্ডারটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এলজিইডি অফিস থেকে আওয়ামী লীগের ওই সিন্ডিকেট বাইরে কারও কাছে ফরম বিক্রি করা হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতারা পছন্দের ব্যক্তিদের কাছ থেকে শতকরা ১০-২০ টাকা হারে হাতিয়ে নিয়ে নিয়ম রক্ষার জন্য পাতানো টেন্ডার দাখিল করেছেন। উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী অনুপম কুমার বড়ুয়া বলেন, সকালে আমি কাজ তদারকির জন্য বের হয়েছি। এ সময় অফিসে তো তালা থাকার কথা নয়। এ বিষয়ে কেই আমাকে ফোন করেনি। দরপত্রের কতটি ফরম বিক্রি ও দাখিল হয়েছে, তা এখন বলা যাচ্ছে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু ইউছুফ বলেন, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। দরপত্র দাখিলের সময় অফিসে তালা মারা ছিল কিনা, খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আহ্বান করা প্রকল্পের মধ্যে দুটি ইতোমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। জানতে চাইলে উপজেলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ ক ম রুহুল আমিন, আওয়ামী লীগ নেতারা নন, ঠিকাদাররাই টেন্ডারটি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। অর্থ আদায়ের বিষয়টি আমি অবগত নই। আহ্বান করা টেন্ডারে দু-একটি ভুয়া প্রকল্প রয়েছে। যেগুলোর কাজ আগেই করা রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
0Share